ঢাকার গুলশানে সাবেক একজন সংসদ সদস্যের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় তাকে জড়িয়ে যে বক্তব্য এসেছে সেটিকে রাজনৈতিক ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
যিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন, সেই জানে আলম অপুকে চিনলেও তার সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন উপদেষ্টা।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আসিফ মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ওই ঘটনায় তার নাম আসায় তিনি ‘অবাক’ হয়েছেন।
উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদে থাকার সময় ২০২২ সালের তিনি জানে আলম অপুকে চিনতেন। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের পর অপুর সাথে তার কোনো কথা হয়নি।
“এই ধরনের একটা ক্লেইম আসার পরে আমি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আজ দেখলাম, তার স্ত্রী পরিচয়ে এক নারী সংবাদ সম্মেলন করেছেন। আমি খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি কী ঘটনা।
“তবে তিনি (নারী) সেখানে দাবি করেছেন অপুকে গুম করে নিয়ে এই স্টেটমেন্ট আদায় করা হয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে তা অত্যন্ত শঙ্কাজনক।”
দেশ আবার ৫ অগাস্টের আগের অবস্থায় ফিরে যাচ্ছে কিনা, এমন সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “এটা আসলে ঢাকা ইউনিভার্সিটির গেস্টরুমে হত। আমাদের এখানে আয়নাঘর ছিল, যেগুলো ৫ অগাস্টের পর অকার্যকর, ওইদিকেই আমরা যাচ্ছি কিনা, এটা শঙ্কার বিষয়।”
গুলশানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির মামলায় ৩১ জুলাই রাতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বহিষ্কৃত যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার আগে ২৬ জুলাই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের মধ্যে চারজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা। তারা হলেন মো. সাকাদাউন সিয়াম (২২), সাদমান সাদার (২১), মো. ইব্রাহিম হোসেন (২৪) ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ (২৫)। আর অপরজন শিশু।
বুধবার অপুর একটি ভিডিও ফেইসবুকে ছড়ায়, সেখানে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আফিস মাহমুদের নামে এসেছে। ভিডিওটি অপুকে গ্রেপ্তারের আগে করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
প্রবাসী ইউটিউবার জাওয়াদ নির্ঝরের ফেইসবুক আইডিতে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছে।
সেখানে অপুকে বলতে শোনা যায়, গুলশানে চাঁদাবাজির ঘটনায় টাকার ব্যাগ নিতে যে ছেলেকে দেখা গেছে সেটা তিনি।
“আপনারা একটি ফুটেজের মাধ্যমে দেখেছেন যে সমন্বয়করা চাঁদাবাজিতে জড়িত। যে সমন্বয়ক গত বছর ছিল মহানায়ক তারা হয়ে গেলো চাঁদাবাজ।”
জানে আলম অপু দাবি করেন ওই ঘটনার আগে আসিফ মাহমুদের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল।
“আপনারা কি জানেন, ওইদিন ভোর ৫টায় ওই জোনের ডিসি-এসিকে অবগত করে একদম অফিসিয়াল প্রসেসে পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শাম্মীর (সাবেক এমপি) বাসায় আমরা অভিযান চালাই। আপনারা কি জানেন, সেই অভিযানে যাওয়ার আগে গুলশানের কোনো একটি জায়গায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে আমার কথা হয়।”
মাথায় হেলমেট পরা অবস্থায় মোটরবাইকে করে সেখানে যাওয়া একজনকে আসিফ মাহমুদ বলে দাবি করা হয়েছে সেই ভিডিওতে।
সে ব্যক্তি তিনি কি-না এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, তিনি প্রায়ই রাতে ৩০০ ফুট (আগের পূর্বাচল এক্সপ্রেস) এলাকায় হাঁসের মাংস খেতে যান কয়েকজনের সঙ্গে। সেখানকার রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকলে ওয়েস্টিনে যান। তবে সেদিন সেখানে গিয়েছিলেন কি না মনে করতে পারছেন না।
“ওইদিন সেখানে গিয়েছিলাম কি না, ঠিক মনে করতে পারছি না। সিসি ক্যামেরায় হেলমেট পরা যে কাউকে যদি আমি বলে দাবি করা হয় সেটা কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য? এ বিষয়ে বেশিকিছু বলতে চাই না, যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে।”
ওই ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা নেই দাবি করেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’।
“এখন পর্যন্ত কেউ প্রমাণ দিতে পেরেছে যে আমার সম্পৃক্ততা আছে? বরং যার (জানে আলম অপু) সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে, এই সাক্ষাৎকার একজন রাজনৈতিক নেতার বাসায়, একজনকে জোরপূর্বক নেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, এটা অত্যন্ত গুরুতর একটা অভিযোগ।
“এটা পরিবারের দিক থেকে এসেছে, যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্য, এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে। এটা, এরকম অনেক কিছু আপনারাও ইতোমধ্যে দেখেছেন। আমরা সেগুলো ডিফেন্ড করেছি। এখন দেখছেন, সামনেও হয়তো দেখবেন।”