অটোরিকশার নগরীতে পরিণত হয়েছে কুমিল্লা। পাঁচ হাজার ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত তিন চাকার যান দাপিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো শহর । এছাড়া কুমিল্লা নগরীতে আছে তিনটি বাসস্ট্যান্ড। যত বেশি গাড়ি ও অটোরিকশা রাস্তায় চলে, তত বেশি ইনকাম কুমিল্লার ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিম কুদ্দুছ ভূঁইয়ার। জুলাই বিপ্লবের পর কিছুদিন নগরীতে চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও কয়েক মাস ধরে পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে। চাঁদাবাজির প্রতিযোগিতায় নেমেছেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাদের সারিতে নাম লিখিয়েছেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিমের চাঁদাবাজির একটি অডিও রেকর্ড সম্প্রতি এক প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। এতে শোনা যায়, এখন থেকে বাসস্ট্যান্ডের কোনো টাকা সার্জন বা টিআইকে দেবেন না। আমার লোক আসবে তার কাছে দেবেন। অডিওতে ভুক্তভোগীকে বলতে শোনা যায়, একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরাসরি টাকার জন্য আসে জীবনে প্রথম দেখলাম । সব কাউন্টার থেকেই সরাসরি গিয়ে চাঁদা চেয়েছেন তিনি। সরাসরি পুলিশের পোশাকেই এসেছিলেন শামিম। অডিওতে বলতে শোনা যায়, এক বাসমালিক বলছেন ৩৮ বছর বয়সে এই প্রথম দেখলাম কোনো অতিরিক্ত এসপিকে সরাসরি এসে টাকা চাইতে ।
কুমিল্লায় তিনটি জোন আছে । লাকসাম জোন ২০ হাজার, দাউদকান্দি ও দেবীদ্বার থেকে ৩০ হাজার টাকা করে প্রতি মাসে আদায় করেন শামিম। এছাড়া কুমিল্লায় পাঁচ হাজার অটোরিকশা চলাচল করে। প্রতিটি থেকে মাসে ৫০০ টাকা আদায় করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের অনেক তথ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে ফাঁস করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিম । এমন একটি ঘটনার প্রমাণও পাওয়া গেছে কিছুদিন আগে। ডিএসবিতে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর তাকে ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে বদলি করা হয়।
কুমিল্লা নগরীতে সার্জেন্ট ও টিএসআই আছেন ১১ জন। আর পুরো জেলায় আছেন ১৭ জন । ট্রাফিক সদস্য আছে ৮৯ জন । প্রতি সার্জেন্টকে মাসে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে শামিম। বিষয়টি নিয়ে সার্জেন্টদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও তারা কিছুই বলতে পারছেন না।
চাকরি হারানোর ভয়ে নাম প্রকাশ না করে এক সার্জেন্ট বলেন, একটি বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তা শামিম আমাদের বলেন, আমি ২০টি পরিবহনের নাম দেব । এগুলোর প্রত্যেকটি থেকে একটি করে গাড়ি ডাম্পিং করে রাখবেন । প্রতি গাড়ি মাসে ৫০০ টাকা করে দেবে । আমি কি এখানে হজ করতে এসেছি, আমারও তো সংসার আছে ।
হয়রানির শিকার হওয়ার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসমালিক বলেন, একদিন পুলিশের পোশাকে শামিম জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডে আসেন । গাড়ি থেকে নেমেই বলেন, ‘যোগাযোগ আমার সঙ্গে করবা, আমি ট্রাফিক ইনচার্জ।’
সার্জেন্টদের কাছ থেকে মাসে ২০ হাজার, কুমিল্লার তিনটি জোন থেকে মাসে ৫০ হাজার করে তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা শামিম বলেন, টিআই ও সার্জেন্টরা এগুলো করেন । আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে । এগুলো সব মিথ্যা।
কুমিল্লা পুলিশ সুপার নাজির আহমদ খান বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শামিম সরাসরি টাকা চাইবে, এরকম হওয়ার কথা নয়। এখন পর্যন্ত আমি কোনো অভিযোগ পাইনি। বাসস্ট্যান্ডের মালিক বা সাধারণ মানুষ অভিযোগ করলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.