সড়ক ও নৌপথের পাশাপাশি দেশের আকাশপথ দিয়েও দেদার পাচার হচ্ছে মাদক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে কখনো লাগেজের ভেতর বিশেষ চেম্বারে, আবার কখনো পাকস্থলীতে বহন করে আনা ইয়াবা ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়।
সম্প্রতি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজের হাতলের ভেতর ও কাপড়ে করে পাচারের সময় প্রায় আট হাজার ইয়াবাসহ মা ও মেয়েকে গ্রেফতার করেছে আর্মড পুলিশ।
লাগেজের হাতলের ভেতর পলিথিনে মুড়িয়ে স্ক্র দিয়ে আটকানো ছিল ইয়াবা। দুটি লাগেজের হাতল খুলতেই বেরিয়ে আসে থরে থরে সাজানো প্যাকেট। উদ্ধার হয় প্রায় ছয় হাজার পিস ইয়াবা।
পরে নারী পুলিশ সদস্যরা তল্লাশি চালিয়ে কাপড়ের ভেতরে সুকৌশলে লুকিয়ে রাখা আরও দুই হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেন। আটক রোজিনা ও ফাহমিদাকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা মা ও মেয়ে; কক্সবাজার থেকে টাকার বিনিময়ে এভাবে ইয়াবা বহন করাই তাদের কাজ।
আর্মড পুলিশ জানায়, গত এক বছরে এ ধরনের ১০টির বেশি অভিনব ইয়াবা চালান আটক করে ১৪ জনের কাছ থেকে প্রায় দেড় লাখ পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশের অপারেশনাল কমান্ডার মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মাদককারবারিরা মাদক আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে নানা রকম কৌশল অবলম্বন করছে। লাগেজ তল্লাশি করে কিছু মিলছে না, অথচ লাগেজের হাতলে সুকৌশলে মাদক ঢোকানো হচ্ছে-এ ধরনের কৌশলও সম্প্রতি ধরা পড়েছে।
শুধু লাগেজ বা কাপড়েই নয়, পাকস্থলীতে করেও ইয়াবা আনা হচ্ছে আকাশপথে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার থেকে ফেরার পর রাজু মোল্লা নামের এক যাত্রীকে আটক করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ। প্রথমে তার লাগেজ তল্লাশি করা হলেও কোনো মাদক মেলেনি। পরে এক্সরে করতেই পেটের ভেতর ডিম্বাকৃতির ২০টি বস্তু ধরা পড়ে। পরে পায়ুপথ দিয়ে বের করা হয় ১ হাজার পিস ইয়াবা।
আর্মড পুলিশ জানিয়েছে, মাদক কারবারিরা মিয়ানমারের মংডু থেকে সমুদ্রপথে ইয়াবা আনে কক্সবাজারের নাফ নদীতে। সেখান থেকে এগুলো সীমান্তবর্তী উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফে পৌঁছে, তারপর কক্সবাজার বিমানবন্দর হয়ে ঢাকায় পৌঁছায়।
মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক বলেন, মংডু থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে মাদক প্রবেশ করছে। স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী ও কিছু রোহিঙ্গাদের যোগসাজশে এই প্রক্রিয়া চলছে। যেভাবে মাদক আনা হচ্ছে, তা ধরতে কিছুটা সময় লাগছে, তবে নিয়মিতই ধরা পড়ছে।
এদিকে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) কাছে আটক হওয়া বেশিরভাগ ইয়াবাই দুইটি বিমানবন্দরের স্ক্যানারে চেকিংয়ের পরেও ধরা পড়েনি। অপরাধ বিশ্লেষকেরা বলছেন, সঠিকভাবে স্ক্যান করা হয়নি বলেই মাদকগুলো বেরিয়ে এসেছে। মাদক পাচার বন্ধে যথাযথ স্ক্যানিং ও নজরদারি বৃদ্ধির বিকল্প নেই।
সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হক বলেন, বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রী আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে স্ক্যানিং কার্যক্রমে জড়িতদের জবাবদিহিতা বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়া প্রযুক্তি ও জনবল সংক্রান্ত ঘাটতি সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
মাদক চোরাচালান বন্ধে অত্যাধুনিক স্ক্যানার মেশিন বসানোরও পরামর্শ বিশ্লেষকদের। পাশাপাশি বাড়াতে হবে গোয়েন্দা নজরদারি।
সূত্র : দৈনিক কক্সবাজার
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.