মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির জন্য ৯০০ বস্তা সিমেন্ট নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর বরিশাল থেকে সাগরপথে যাচ্ছিলেন আরাফাত হোসেনসহ কয়েকজন।মিয়ানমারে সিমেন্ট পৌঁছে দেয়ার পর স্বজনরা আরাফাতের কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না।
এরপর গত ১১ সেপ্টেম্বর রাত ৩টায় সেন্টমার্টিন থেকে ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে ছেঁড়াদ্বীপ থেকেও পাঁচ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে গভীর সাগরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন সেন্টমার্টিন দ্বীপের নছিউল্লাহ নামের মাঝি। উদ্ধারের পর নছিউল্লাহ জানতে চান এই গভীর সাগরে তিনি কিভাবে এলেন। এরপর আরাফাত হোসেনের বয়ানে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
মাত্র ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে তার এক আত্মীয়ের সাথে তিনি বরিশাল থেকে ৯০০ বস্তা সিমেন্ট নেয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যান। তার অভিযোগ, তার আত্মীয় ইমরান জানিয়েছে, একটা ট্রিপ আছে ৬-৭ দিন থাকতে হবে, বিনিময়ে ১০ হাজার টাকা পাবে।
লোভে পড়ে চোরাচালানিদের সাথে গভীর সমুদ্র দিয়ে মিয়ানমারে সিমেন্ট পৌঁচ্ছে দিয়ে ফেরত আসার সময় অপরিচিত একটি বোট তাদের তাড়া করে। এরপর ভয়ে বোট থেকে লাফিয়ে সাগরে পড়ে যায় আরাফাত।
উদ্ধার হওয়া আরাফাত হোসেনের (২৫) বাবা মো: আব্দুল গাজী জানান, তাদের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার সদর থানার কামাল নগর গ্রামে। তিনি পেশায় লন্ড্রি ব্যবসায়ী। গত ৮ আগস্ট তার ছেলেকে মিয়ানমারের সিমেন্ট পাচারের জন্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে নিয়ে গিয়ে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেন আরাফাতের খালাতো ভাইয়ের শ্যালক ইমরান। বিনিময়ে আরাফাতের সাথে ১০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়।
বর্তমানে আরাফাত টেকনাফে কোস্টগার্ডের হেফাজতে আছেন। ওই এলাকার চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে আরাফাতের বাবাকে বলেছেন কোস্টগার্ড কর্মকর্তারা।
উদ্ধার করা মাঝি মো: নছিউল্লাহ (৫০) বলেন, গভীর সাগরে ভাসমান অবস্থায় আমরা আরাফাতকে প্রায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করি। এরপর তাকে পানি ও খাবার খাইয়ে কোনো রকম সেন্টমার্টিনের জেটিতে নিয়ে আসি। সেখানে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি বলেন, ছেলেটা আর ১০-১৫ মিনিট থাকলে মারা যেতেন। প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা সাগরে ভাসছিলেন। এ অবস্থায় জীবিত ফেরাটাই তার জন্য ভাগ্যের বিষয়।
গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ওই মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সাথে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তুমুল লড়াই হয়। যুদ্ধবিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহারের ফলে জান্তা বাহিনীর কাছ থেকে রাখাইন রাজ্য দখল নেয়। বর্তমানে মংডুর ২৭১ কিলোমিটারও রয়েছে আরাকানদের দখলে। কিন্তু তারা সরকারবিরোধী হওয়ায় খাদ্য, পণ্যসহ সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে চরম খাদ্যসঙ্কট দেখা দেয়। এরই মধ্যে তারা বাংলাদেশের চোরাচালানির মাধ্যমে সাগরপথ ব্যবহার করে খাদ্যপণ্য নিয়ে সেখান থেকে পাঠানো হচ্ছে ইয়াবাসহ ভয়ঙ্কর মাদক।
অভিযোগ উঠেছে সীমান্তের ওপারে খাদ্যসামগ্রী সাথে রড সিমেন্ট যাচ্ছে। সেসব রড সিমেন্ট দিয়ে সীমান্তে তার নিরাপত্তা জোরদারের জন্য অবকাঠামো তৈরি করছে। চরম খাদ্যসঙ্কটের কারণে ইয়াবা আইসের বিনিময়ে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে আলু, চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, ওষুধ, জ্বালানি, ইউরিয়া সারসহ ৮-৯ ধরনের সামগ্রী। দুই সীমান্ত এলাকার পুরো চক্র রুট হিসেবে গভীর সামুদ্রিক এলাকা ব্যবহার করছে।
এদিকে বঙ্গোপসাগরের গভীরে মিয়ানমার থেকে ফেরা আরাফাতকে জীবিত উদ্ধারের পর গত রোববার অভিযান চালিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ সমুদ্র অভিযান কর্তৃক নিয়মিত টহল চলাকালীন সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ থেকে আনুমানিক ১০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে বাংলাদেশের জলসীমায় একটি কাঠের বোট দেখতে পায়। এ সময় বোটটির গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে নৌবাহিনী জাহাজ বোটটির কাছে যেতে থাকে। নৌবাহিনীর জাহাজের আগমন টের পেয়ে বোটের গতি বাড়িয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ধাওয়া করে ১১ জন পাচারকারীসহ ‘এফ বি আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী-১’ নামক বোটটিকে আটক করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। বোটটি তল্লাশি করে আলু ১৫ হাজার কেজি, রসুন ৭৫০ কেজি, ময়দা দুই হাজার ৫০০ কেজি, মসুর ডাল দুই হাজার ৫০০ কেজি, কোমল পানীয় (টাইগার/স্পিড) ১৪ হাজার ৪০০ পিস, গ্যাসলাইটার-৬০০ পিস, শেভিং ব্লেড ৮০০ পিস, তিনটি মোবাইলফোন, একটি বাইনোকুলার, একটি কম্পাস এবং ৪০০ ফুট কারেন্ট জাল উদ্ধার করা হয়। ©নয়াদিগন্ত
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.