কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরকেন্দ্রিক সংকট মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি। রবিবার (২৪ আগস্ট) উখিয়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ দাবি তুলে ধরেন অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি পালংখালীর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হোসাইন রবি।
সংগঠনটি জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয় প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা। এর সঙ্গে চলতি মাসের ৫ আগস্টের পর আরও ২ লাখ রোহিঙ্গা অবৈধভাবে প্রবেশ করে। বর্তমানে ৩৪টি ক্যাম্পে বসবাস করছে ১৬ লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, এত বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার চাপ স্থানীয় জনজীবন, কৃষিজমি, বন, শিক্ষা, নিরাপত্তা, শ্রমবাজার, সবকিছুতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। স্থানীয় শ্রমিকরা কাজ হারাচ্ছে, আর এনজিও-আইএনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের চাকরি ও সুবিধা দিয়ে প্রত্যাবাসনকে নিরুৎসাহিত করছে।
সংগঠনটির অভিযোগ, ইমার্জেন্সি কারণ ছাড়া ক্যাম্প থেকে বের হতে অনুমতি না থাকলেও রোহিঙ্গারা অবাধে যাতায়াত করছে। ফলে মাদক চোরাচালান, সন্ত্রাস, অস্ত্র, অপহরণসহ নানা অপরাধ বাড়ছে। পাশাপাশি ক্যাম্পে ৪জি ইন্টারনেট, ব্রডব্যান্ড সংযোগ এবং অবৈধভাবে নিবন্ধিত প্রায় ১২ লাখ সিম ব্যবহারের কারণে অপরাধ আরও বাড়ছে বলে দাবি করা হয়।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে ফান্ড সংকট দেখিয়ে ইউনিসেফের অর্থায়নে পরিচালিত ক্যাম্প শিক্ষা প্রকল্প থেকে ১১৭৯ জন হোস্ট টিচারকে ছাঁটাই করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। তারা অবিলম্বে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের পুনর্বহালের দাবি জানান।
সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সঠিক মনিটরিং না থাকায় স্থানীয়রা প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। এসব অব্যবস্থাপনা ও অবৈধ সুবিধা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের নিকট আবেদন জানিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তাদের নিয়ন্ত্রণে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান বক্তারা।
তাদের ৮ দফা দাবির মধ্যে প্রথমেই অনতিবিলম্বে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়েছে। এরপরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিক্ষা প্রকল্প থেকে চাকরিচ্যুত স্থানীয় শিক্ষকদের অবিলম্বে পুনর্বহালের দাবি, ক্যাম্পের বাহিরে রোহিঙ্গাদের অবাধ যাতায়াত শতভাগ বন্ধ করা, কাটাতারের বাহিরে বাসা ভাড়া নেওয়া রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া, মাদক অপহরণ মায়ানমারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলা ও বিজিবির পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা এবং গার্ড ও ক্লিনার ব্যতীত বিভিন্ন পদে চাকরিরত প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে স্থানীয়দের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
উখিয়া-টেকনাফকে ফার্স্ট প্রায়োরিটি দিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চাকরির নিয়োগে স্থানীয়দের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ অগ্রাধিকার দিতে হবে। ইউএন অর্গানাইজেশন ও এনজিওগুলোর বাজেটের অন্তত ২৫ শতাংশ শুধুমাত্র উখিয়া-টেকনাফে ব্যয় করতে হবে এবং একই সাথে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে উৎসাহিত করতে এনজিও ও আইএনজিওগুলোকে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
এসময় উখিয়া উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক, ছাত্রশিবিরের সভাপতি, রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে চাকরিচ্যুত স্থানীয় শিক্ষকদের প্রতিনিধি ও অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.