চরফ্যাশন পৌর সদরের যানজট নিরসনের জন্য সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে পৌরসভার অর্থায়নে তিন একর জমির ওপর প্রায় ২০ কোটি টাকায় ব্যয়ে নির্মাণ আধুনিক বাস টার্মিনালে সন্ধ্যা হলেই মুখর হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের আড্ডা, প্রকাশ্য বসছে জুয়ার আসর।
গত বছর নভেম্বর মাস থেকে বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস আসা-যাওয়া না করায় পরিত্যক্ত পড়ে আছে আধুনিক বাস টার্মিনালটি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই নির্জন বাস টার্মিনালে ভিড় জমান যুবক-কিশোরসহ নানান শ্রেণি-পেশার মানুষ। হয়ে ওঠে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য। মোমের আলোতে জমে ওঠে জুয়ার আসর। এতে বিপাকে পড়েছেন বাস টার্মিনাল এলাকায় বসবাসরত বাসিন্দারা। নির্জন বাস টার্মিনালে জুয়াড়ি ও মাদকসেবীদের আনাগোনার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা। এদিকে বাস টার্মিনালে বাস আসা-যাওয়া বন্ধ করে বাজারের ভেতরে বাসের যাত্রী ওঠানামা ও স্টেশন স্থাপন করায় তীব্র যানজটে নাকাল হয়ে পড়েছে বাজারের ব্যবসায়ীসহ পথচারীরা।
যদিও বাস চালকদের দাবি, বাজারের ভেতরে একটি সিএনজি স্টেশন হওয়ার কারণে চরফ্যাশন থেকে ভোলাগামী বাসে যাত্রী কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসমালিকরা। এ জন্যই তারা বাস টার্মিনাল ছেড়ে আগের ন্যায় সদর বাজারে তাদের পুরাতন জায়গায় বাস স্টেশন করেছেন। চরফ্যাশন পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, যানজট নিরসনের জন্য পৌর সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে তিন একর জমির ওপর ২০ কোটি টাকায় ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে এ টার্মিনালের নির্মাণকাজ শুরু হয়। যা শেষ হয় ২০১৮ সালে। এই টার্মিনালে রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার স্কয়ারফুটের উন্নতমানের কাচে মোড়ানো তিনতলা ভবন। যে ভবনে সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার ছাড়াও অত্যাধুনিক সুবিধার ভিআইপি বিশ্রামাগার, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, হলরুম, মিটিং রুম, দশটি চায়ের স্টল, পর্যাপ্ত শৌচাগারসহ প্রত্যেক রুটের জন্য পৃথক টিকেট কাউন্টারের ব্যবস্থা। নির্মাণকাজ শেষের পর ২ আগস্ট ২০১৮ টার্মিনালে আনুষ্ঠানিকভাবে বাস চলাচল শুরু হয়। গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মুখ থুবড়ে পড়েছে বাস টার্মিনালটি।
সরেজমিন দেখা যায়, চারতলা বিশিষ্ট বাস টার্মিনালের ভবনের কোটি টাকার আসবাবপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাস টার্মিনালের চারপাশসহ মূল ভবনের বেশ কিছু স্থানে ময়লা-আবর্জনায় ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ভেতর-বাহিরে জমে আছে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এছাড়াও টার্মিনালটির পশ্চিম পাশে সাধারণ মানুষ অবাধে বিচরণ করায় স্থানীয়রা ময়লা ফেলায় বাস টার্মিনালজুড়ে পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। টিকেট কাউন্টারগুলোতে জমেছে ধুলোর স্তূপ। স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ হাওলাদার জানান, বাসটার্মিনালটি ২ মাস যাবত বন্ধ থাকায় ওই এলাকায় ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। সন্ধ্যা হলেই আনাগোনা বেড়ে যায় বহিরাগত যুবকদের। পাশাপাশি মোটরসাইকেলে যুবকরা এসে ভিড় জমান বাস টার্মিনালে। স্থানীয় শিশু-কিশোররা উঁকিঝুঁকি দিলে মাদকসেবীদের মারধরের শিকার হয়েছেন অনেকেই।
ওই গ্রামের বাসিন্দা সোহেল জানান, রাতে হলে বাসটার্মিনালের পরিত্যক্ত রুমে জ্বলে মিটমিটে আলো। তামাক পোঁড়া গন্ধে ভারী হয়ে উঠেছে বাসটার্মিনাল এলাকার আকাশ-বাতাস। রাত হলেই হাঁকডাক দিয়ে বসে জুয়ার আসর ও মাদকের আখড়া। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে ক্ষণিকেই পালিয়ে যায় এসব মাদকসেবী ও জুয়াড়িরা।
বাস মালিক সমিতির আঞ্চলিক চরফ্যাশন শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. সবুজ মিয়া জানান, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এতে সদর থেকে অটোরিকশায় বাস টার্মিনাল যেতে যাত্রীসাধারণের আরও অতিরিক্ত ৫০ টাকা বেশি গুনতে হয়। এতে বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীদের এবং সদর থেকে দূরত্ব হওয়ার কারণে অনেক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। সবদিক বিবেচনা করে পৌর সদর বাজার সংলগ্ন বাস স্ট্যান্ডেই তারা বাস রেখে সব রুটে চলাচল করছেন।
চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান হাওলাদার জানান, দুই মাস ধরে বাস টার্মিনালটিতে কোনো বাস আসা-যাওয়া না করায় ওই এলাকায় কিছু অপরাধপ্রবণতা দেখা দিয়েছে। সেদিক বিবেচনা করে রাতে প্রায় সময় ওইসব এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক রাসনা শারমিন মিথি জানান, বিগত বছরে বাস টার্মিনালটি পৌরসভা ইজারা দিয়েছে। ওই ইজারার মেয়াদ এখনও চলমান রয়েছে। তবে যেহেতু বাস মালিকরা তাদের নিজস্ব স্ট্যান্ডে বাস রেখে পরিচালনা করছেন, সেহেতু পৌরসভার পক্ষ থেকে বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনা করে ফের ওই বাস টার্মিনালে বাস স্থানান্তর করার জন্য আলোচনা চলছে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.