নিজের অতিপ্রিয় ক্যামেরাটি বিক্রির পোস্ট দিয়েছিলেন বশির। তিনি বলেন, ‘আমার পোস্টটি কোনো প্রচারণা ছিল না; এটি ছিল একজন ডুবে যাওয়া মানুষের খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকার আশা। এক টুকরো রুটি এখন স্বপ্নের মতো। আমি আমার বাচ্চাদের অনাহারে থাকতে দেখেছি, এবং আমার বাড়িতে একেবারেই খাবার অবশিষ্ট ছিল না। আমার ক্যামেরা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার তৃতীয় নয়নের বিনিময়ে হলেও আমার বাচ্চাদের বাঁচান।’ গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস ঘোষণা করেছে, গাজাজুড়ে দুর্ভিক্ষ আরও খারাপ হচ্ছে। এই বিপর্যয় এড়াতে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে পাঁচ লাখ ব্যাগ আটার প্রয়োজন। এছাড়াও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে দুর্ভিক্ষ এখন পর্যন্ত ১৮৮ জনের মৃত্যু ঘটিয়েছে। তাদের বেশির ভাগই শিশু এবং বয়স্ক।
এদিকে, অপুষ্টি এবং ক্ষুধাজনিত অসুস্থতায় ভুগছেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। এই সংকটে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিক আহমেদ আবদেল আজিজ বলেন, ‘গাজার পরিস্থিতি অবিশ্বাস্য। ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ রাস্তায় পড়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সহায়তা কেন্দ্রগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।’ আহমেদকে নিজের পরিবারের খাওয়ানোর জন্য তার একটি মাইক্রোফোন বিক্রি করতে হয়েছিল। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে তার পরিবার মাত্র দুদিন খেতে পেরেছিল। সাংবাদিক বশিরের মতো তিনিও এখন নিজের ক্যামেরা বিক্রি করার কথা ভাবছেন। আবদেল বলেন, ‘আমরা কেবল যুদ্ধের নথিভুক্ত করি না – আমরা বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সরঞ্জাম বিক্রি করি’। এক কেজি আটার দাম ১০০ শেকেলে পৌঁছেছে যা প্রায় ২৯ ডলার। আয়ের কোনো উৎস না থাকার কারণে একটি অসহনীয় খরচ। ফটোসাংবাদিক ফাদি থাবেতও একই রকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন।
গাজার জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে ফাদির ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। কিন্তু এখন তিনি আর তার সন্তানদের খাওয়াতে পারছেন না। শেষ পর্যন্ত এক বস্তা আটার বিনিময়ে তার পুরো সাংবাদিকতা সংরক্ষণাগার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন।
সাংবাদিক ফাদি বলেন, ‘আমরা কেবল আমাদের পেটের ক্ষুধায় ভুগছি না বরং আমাদের মর্যাদার অবমাননাতেও ভুগছি। এটি জনগণকে অনাহারে রাখা এবং তাদের ইচ্ছা ভঙ্গ করার একটি ইচ্ছাকৃত নীতি।’ যন্ত্রণায় ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মৃত্যুকে নথিভুক্ত করি, তারপর নিজেরাই বেঁচে থাকি।’
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.