টেকনাফে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে উচ্চমুল্যে সার বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,উচ্চমূল্যে সার ক্রয় না করার কোন পথই দেখছেন না তারা। তবে সময়মতো জমিতে সার প্রয়োগ করতে না পারলে ফলনে সমস্যা দেখা দিবে মর্মে নিরুপায় হয়ে কৃষকরা বিসিআইসি ডিলার মালিকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত দামে সার ক্রয় করেছেন বলে ভুক্তভোগীরা কৃষকরা সুত্রে জানাগেছে। উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের বেশ কয়েকজন কৃষক এই প্রতিবেদককে নিজেদের অভিযোগের কথা জানিয়েছন,সার ক্রয়ের সময়ে পৃথকভাবে তারা ২জন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে বিসিসিআই ডিলারের দোকানে দেখতে পেয়ে সাথে সাথে তাঁদেরকে বিষয়টি জানালে তারা (উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা) ইউএন বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগের পরার্মশ দিয়েছেন। বিষয়টিতে ভুক্তভোগী কৃষকরা চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন। ক্ষুব্ধ কৃষকরা (তারা) সংশ্লিষ্ট উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিসিসিআই ডিলার মালিকের পক্ষ থেকে বিশেষ সুবিধা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেন। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,বিসিআইসি ডিলার মালিকরা অন্য আইটেমের সার ক্রয়ের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে ইউরিয়া সার বিক্রয় করছেন। অন্য আইটেমের সার না কিনলে অতিরিক্তি দামে ইউরিয়া সার বিক্রয় করছেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।
কৃষি অফিস সুত্র জানায়, সরকার কর্তৃক ইউরিয়া সার প্রতি বস্তা ১৩শ ৫০টাকা মূল্য নির্ধারণ করা থাকলেও কোন ডিলার বা তার প্রতিনিধিকে উপরোক্ত মূল্যে সার বিক্রয় করতে দেখা যায়নি। বিসিআইসি সার ডিলার অতিরিক্তি ২/৩শ টাকা দামে সারের বস্তা বিক্রি করছেন এমনটি অভিযোগ অহরহ কৃষকের।
কৃষি অফিস সুত্রে জানাগেছে, বিসিআইসি ডিলার বা সাব ডিলার সংশ্লিষ্ট দোকানে মূল্য তালিকা টাঙ্গানোর বিধান থাকলেও কোন দোকানেই তা দেখা যায়না। এছাড়া সার বিক্রয়ের সময়ে ক্রেতাকে রসিদ প্রদানের বিধান থাকলেও কোন বিসিআইসি ডিলার বা তার প্রতিনিধি কোনদিনই কোন প্রকার রসিদ দিয়ে সার বিক্রি করেননি বলে কৃষকদের অভিযোগ। এমনকি সার ক্রয়ের সময়ে ক্রেতারা রসিদ চাইলেও দেন না বলে বিসিআইসি ডিলার মালিকদের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের অভিযোগ। এতে করেই উচ্চমুল্যে সার বিক্রয়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে বলে কৃষি সংশ্লিষ্টদের দাবী।
ন্সীলার পানখালী এলাকার কৃষক খলিল আহমদ জানান,চলতি মৌসুমে তিনি অন্তত ৪০কানি জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। উল্লেখিত জমিতে সার প্রয়োগ করতে গিয়ে তিনি এক নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন,হ্নীলার বিসিসিআই ডিলার এবং পরিচালক মাহবুব ও বাবুল থেকে প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার ১৫শ ও ১৬শ টাকা মূল্যে ১৮-২০বস্তা কিনেছেন বলে জানিয়েছেন। উচ্চমুল্যের বিষয়টি ডিলারের দোকানে বসে থাকা জনৈক উপ সহকারী কৃষি অফিসার আনোয়ার হোসাইনকে সাথে সাথে জানিয়েও কোন সুরাহা পাননি বলে ক্ষোভের সাথে জানিয়েছেন এই কৃষক।
হোয়াব্রাং এলাকার কৃষক ইব্রাহীম জানান,এবছর তিনি ৮কানি জমিতে আমনের চাষ করেছেন। তিনি ডিলার মাহবুব ও বাবুল থেকে প্রতি বস্তা সার সাড়ে ১৫শ থেকে ১৬শ টাকা মুল্যে কিনে জমিতে প্রয়োগ করেছেন বলে জানান। তিনিও সাথে সাথে বিষয়টি উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ারকে জানিয়েও কোন সমাধান পাননি। এমনকি কৃষি অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োজিত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নিশ্চুপের বিষয়ে কৃষকদের মনে সন্দেহ পোষণের কথা জানিয়েছেন।
হোয়াব্রাং এলাকার কৃষক নুরুল কবির জানান,আমি চলতি মৌসুমে ১৫কানি জমিতে আমনের আবাদ করেছি। কিন্তু জমিতে সার প্রয়োগ করতে গিয়ে রীতিমত হিমশিমে পড়ে গেছি। তিনি জানান,১৫কানি জমিতে সার প্রয়োগের জন্য মাহবুব ও বাবুল থেকে নিরুপায় হয়ে ১৫শ টাকা মুল্যে ২০বস্তা সার ক্রয়ের কথা জানিয়েছেন। একই এলাকার কৃষক নুরুল আবসার ৮কানি জমিতে সার প্রয়োগের জন্য ১৫শ টাকা মুল্যে মাহবুব এবং জালাল থেকে ১০বস্তা সার ক্রয় করেছেন।
পানখালী এলাকার কৃষক আব্দুস শুক্কুর ৬কানির জমিতে প্রয়োগের জন্য বস্তা প্রতি ১৫শ ৫০টাকা মূল্যে বাবুল থেকে সার ক্রয় করেছেন। একই এলাকার আব্দুল জলিল বলেন, তিনি ১০কানি জমিতে আমনের আবাদ করেছেন। উল্লেখিত জমিতে সার প্রয়োগের জন্য ১৫শ ৫০টাকা মুল্যে বিসিসিআই ডিলার জালাল থেকে ৫বস্তা সার ক্রয়ের কথা জানান।
মৌলভীবাজার এলাকার কৃষক মো: আলম জানান, তিনি এবছর সাড়ে ৭কানি জমিতে আমনের চারা রোপন করেছেন। রোপনকৃত জমিতে প্রয়োগের জন্য মাহবুবু জালাল ও বাবুল থেকে ১৫শ টাকা মুল্যে ৮বস্তা ইউরিয়া সার ক্রয়ের কথা স্বীকার করেন।
পশ্চিম সিকদারপাড়া এলাকার কৃষক ও নির্মাণ শ্রমিক নেতা নুরুল হোসাইন এ বছর বর্ষা মৌসুমে ৮কানি জমিতে আমনের চাষাবাদ করেছেন। তিনি উপরোক্ত জমিতে প্রয়োগের জন্য ১৫শ টাকা ধরে জালাল থেকে সার কিনেছেন বলে জানিয়েছেন। পূর্ব সিকদারপাড়া এলাকার কৃষক রাজা মিয়াও ডিলার কর্তৃক অতিরিক্তি দামে সার বিক্রির অভিযোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সার ডিলার জালালের দোকানে প্রতি বস্তা সার ১৬শ টাকায় দাবী করলে তিনি পাশ্ববর্তী ডিলার মাহবুব থেকে ১৫শ টাকায় ক্রয় করে জমিতে সার প্রয়োগের কথা জানান। হোয়াকিয়াপাড়া এলাকার কৃষক জালাল আহমদ জানান, জমিতে প্রয়োগের জন্য ডিলার বাবুল থেকে প্রতি বস্তা সার ১৫শ ৫০টাকায় ক্রয়ের কথা জানিয়েছেন।
উল্লেখিত কৃষক ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বা অন্যান্য আইটেমের সার ক্রয়ের শর্ত পূরণ সাপেক্ষ্যে কৃষকদের কাছে ইউরিয়া সার বিক্রয় করা হচ্ছে। তবুও অনেক কৃষক নিরুপায় হয়ে শর্ত পূরণে ব্যার্থ হয়ে উচ্চমুল্যে সার কিনে জমিতে প্রয়োগ করছেন বলে জানান।
উচ্চমূল্যে সার বিক্রয়ে অভিযুক্ত বিসিআইসি ডিলার মের্সাস মাহবুব ব্রাদার্সের প্রোপ্রাইটর মাহবুবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বেশী দামে সার বিক্রয়ের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেন। এদিকে মেসার্স এম হোসেন টেডার্সের পরিচালক বাবুলের সাথে কথা বলতে তার প্রতিষ্ঠানে বেশ কয়েকবার গিয়েও পাওয়া যায়নি। প্রতিবারই তিনি প্রাকৃতিক কাজে বাইরে গেছেন বলে দোকানের লোকজন জানিয়েছেন। অন্যদিকে মের্সাস হ্নীলা এজেন্সীর সত্ত্বাধিকারী জালাল উদ্দিনের সাথে তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
টেকনাফ উপজেলা কৃষি অফিসার মো: হুমায়ুন কবির জানান,সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে সার বিক্রয়ের কোন সুযোগ নেই। তিনি উচ্চমুল্যে সার বিক্রয়ের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন বলে জানান।
টেকনাফে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা সার মনিটরিং কমিটির সভাপতি শেখ মো: এহেছান উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ব্যবহ্রত ওয়াটসআপ নাম্বারে উপরোক্ত বিষয়ে জানতে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও এবিষয়ে কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে উপ পরিচালক,কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কক্সবাজার ড. বিমল কুমার প্রমাণিক বলেন,সার সংকট হবে কেন? তিনি পর্যাপ্ত পরিমাণে সার বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানান। এছাড়া তিনি উচ্চমূল্যে সার বিক্রয়ের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত বিসিআইসি ডিলারদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.