ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল। ইশতেহারে শিক্ষা ও গবেষণায় প্রাধান্য, নিরাপদ ক্যাম্পাস, পোশাকের স্বাধীনতা ও সন্ধ্যা আইন বিলোপে ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’ বলে জানিয়েছে আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) বেলা পৌনে একটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার বটতলা থেকে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান।
১. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালীন সময়টা যেন প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রী তাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান, শিক্ষণীয় এবং একই সাথে আনন্দময় সময় হিসেবে মনে রাখতে পারে, সেই লক্ষ্যে সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ।
এরমধ্যে রয়েছে—
গেস্টরুম-গণরুম সংস্কৃতি, জোরপূর্বক রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দমন-নিপীড়নের মতো ঘৃণিত চর্চা বন্ধ করে ক্যাম্পাসকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব থেকে চিরকালের জন্য মুক্তকরণ।
ভয়মুক্ত পরিবেশে ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করে সকল ধর্ম, বর্ণ, মত ও পথের শিক্ষার্থীর সহাবস্থান ও অধিকার চর্চার সুযোগ নিশ্চিতকরণ।
ক্লাসরুম সংকট নিরসনে সময়োপযোগী অবকাঠামোগত সম্প্রসারণ ও শ্রেণিকক্ষ বৃদ্ধির কার্যক্রম শুরু করা।
শিক্ষার্থী নিপীড়ন, র্যাগিং, অনলাইন-অফলাইনে ঘৃণা ও মিসইনফরমেশন প্রতিরোধে ডাকসুর অধীনে একটি স্বাধীন ‘শিক্ষার্থী সুরক্ষা সেল’ গঠন ও শিক্ষার্থীদের যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে ২৪ ঘন্টা সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ‘ইমার্জেন্সি হেল্পলাইন’ চালু।
ক্যাম্পাসে মাদকসেবী ও ভবঘুরেসহ বহিরাগতদের অনধিকার প্রবেশ রোধ, পুরো ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, ও রাতের আলো জ্বালানো নিশ্চিত করা। হলে বিশেষ সেল গঠন করে তার মাধ্যমে হলে কোনো প্রকার অছাত্র অবস্থান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন হল নির্মাণের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, যেন ভর্তির দিন থেকেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য ‘একটি সিট ও একটি পড়ার টেবিল’ নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
আবাসিক হলগুলোকে মশা ও ছারপোকামুক্ত রাখতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের ওপর ভর্তুকি বৃদ্ধি, পুষ্টিবিদদের সমন্বয়ে টিম গঠন করে খাবারসমূহের স্বাস্থ্যগুণ ও পুষ্টিমান নিশ্চিত করা এবং সামগ্রিক পরিবেশ ও ব্যবস্থাপনার গুণগত উন্নতি।
বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগীয় এলাকা, যেমন মোকাররম ভবন, কার্জন হল, ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে নতুন ক্যান্টিন ও ক্যাফেটেরিয়া স্থাপন, যেন সব শিক্ষার্থী সহজেই সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্যকর খাবার পেতে পারে।
২. নারী শিক্ষার্থীদের পোশাকের স্বাধীনতা, যৌন হয়রানি প্রতিরোধ এবং সর্বোচ্চ সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করা।
এরমধ্যে রয়েছে—
প্রতিটি আবাসিক হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তুকিতে স্যানিটারি প্যাড ডেন্ডিং মেশিন স্থাপন এবং হলের সকল পরিচ্ছন্নতাকর্মী যেন নারী হয়, তা নিশ্চিতকরণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে সার্বক্ষণিক নারী চিকিৎসকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রতিটি নারী হলে স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট চালু করা।
ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি নারী শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোতে সান্ধ্য আইন বিলোসের মাধ্যমে রাতে প্রবেশের সময়সীমা বৃদ্ধি এবং এক হলের নারী শিক্ষার্থীদের অন্য নারী শিক্ষার্থী হলগুলোতে প্রবেশ ও সাক্ষাতের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধা দূর করা।
জরুরি প্রয়োজনে হল থেকে প্রস্থানের জন্য লোকাল গার্ডিয়ানের অনুমতির জটিলতা দূর করে, নারী শিক্ষার্থীদের জরুরি প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় হল প্রভোস্টের অনুমতি সাপেক্ষে রাতে হল থেকে প্রস্থানের নিয়মের সহজীকরণ।
অনাবাসিক নারী শিক্ষার্থীরা যেন হল প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে আবাসিক হলগুলোতে যৌক্তিক সময়কালে রাত্রিযাপন করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।
পড়াশোনা শেষ করে চাকরির প্রস্তুতিকালে বেকার নারী গ্র্যাজুয়েটদের জন্য ছয় মাস মেয়াদে স্বল্প খরচে আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা করতে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় হোস্টেল নির্মাণের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
নারী শিক্ষার্থীদের ব্যবসায়িক আইডিয়া বাস্তবায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণে সহায়তা করতে ‘নারী উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা তহবিল গঠন এবং মেন্টরশিপ, প্রশিক্ষণ ও স্টার্টআপ ইনকিউবেশন প্রোগ্রাম চালু।
৩. শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য বীমা নিশ্চিত করা এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা গ্রহণ ও চলাচল সহজতর করা।
এরমধ্যে রয়েছে—
বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়ানো তথা সার্বক্ষণিক ডাক্তার, অ্যাম্বুলেন্স, ফার্মেসি সেবা নিশ্চিত করা এবং জরুরি ঔষধসমূহ বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করা।
সকল আবাসিক হলে ২৪/৭ অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি ঔষধ ও ফার্স্ট এইড বক্সসহ মেডিকেল কর্নার স্থাপন করা।
প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সহজে বাস্তবায়নযোগ্য স্বাস্থ্য বীমা সেবার আওতায় নিয়ে আসা এবং বীমার টাকা দাবি ও প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করা। শিক্ষার্থীদের মেন্টাল স্ট্রেস, ডিপ্রেশন ও ট্রমা মোকাবিলার মাধ্যমে তাদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে টিএসসিতে একটি ‘মেন্টাল ওয়েলবিয়িং সেন্টার’ গড়ে তোলা।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার জন্য বিদ্যমান ভবনসমূহে র্যাম্প স্থাপন করা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও অন্যান্য একাডেমিক কার্যক্রমে ব্রেইল এবং অন্যান্য সহায়ক ব্যবস্থাসমূহ নিশ্চিত করা।
৪. কারিকুলাম, অবকাঠামো ও পরীক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায় ও গবেষণার মানোয়ন্নয়ন
এরমধ্যে রয়েছে—
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্স কারিকুলাম আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে কিনা, সেটি নিয়মিত পর্যালোচনার জন্য ছাত্র, শিক্ষ ও বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে কমিটি গঠন, যে কমিটির অন্যতম লক্ষ্য হবে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ সৃষ্টি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল অফিসকে গতিশীল করা।
কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিকে একটি বিশ্বমানের লাইব্রেরিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিখ্যাত জার্নাল ও সার্চ টুলস-এর সাবমিশন নেওয়া, লাইব্রেরি সিস্টেমকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনা, এবং আবাসিক হলসমূহের রিডিং রুম ও বিভাগীয় লাইব্রেরিসমূহের পরিবেশ ও সরঞ্জাম উন্নয়ন।
শিক্ষার্থীদের জন্য বাস্তবধর্মী কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সামগ্রিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিখন-শিক্ষণ প্রক্রিয়ার মানোন্নয়ন, এবং শিক্ষার্থীদের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত করে ইন্টার্নশিপের ব্যবস্থা করা।
ফ্রিল্যান্সিং, তথ্যপ্রযুক্তি, সফট স্কিলস ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিদেশি ভাষা শিক্ষা বিষয়ক বাস্তবমুখী ঐচ্ছিক কোর্স চালুর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের চাকরি ও পেশাগত জীবনের উপযোগী করে তোলা।
ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া লিংকেজ তৈরি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান বৈশ্বিক র্যাঙ্কিং-এ উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ৷ শিক্ষক বা প্রশাসনিক ব্যক্তির পক্ষপাতমূলক আচরণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যকর প্রক্রিয়া, এবং রাজনৈতিক প্রভাব বা স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের সংস্কৃতি বন্ধ করে আন্তর্জাতিক মানের নিয়োগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়মিত পারফরমেন্স মূল্যায়ন।
একাডমিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পরীক্ষা, রেজাল্ট ও ক্লাস কার্যক্রম নিশ্চিত করার মাধ্যমে অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্ম চালু করে শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন কোর্স, ওয়ার্কশন ও লেকচার সহজলভ্য করা।
গবেষণার মানোন্নয়ন, গবেষণাগার আধুনিকায়ন, ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনার তৈরি, অবস্থানরত অ্যালামনাইদের সম্পৃক্তকরণ এবং গবেষণা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি।
এমফিল ও পিএইচডি গবেষকদের জন্য আলাদা আবাসনের ব্যবস্থা ও অধিক হারে মাসিক ভাতা প্রদানের উদ্যোগ, যেন গবেষণাকে উৎসাহিত করা যায় এবং প্রশিক্ষণ প্রকাশনা সহায়তার সুযোগ হয়।
৫. পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, ব্যাটারিচালিত শ্যাটস লার্ভিস চালু এবং যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করা
এরমধ্যে আরও রয়েছে—
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে পরিবেশবান্ধব ও ব্যাটারিচালিত পর্যাপ্ত পরিমাণ শাটল সার্ভিস চালু করা।
সকল রুটে আপ ট্রিপ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ও ডাউন ট্রিপ ৯টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সাথে সংযুক্ত শিক্ষার্থী বাস এবং বাস রুটের সংখ্যা ও পরিসর যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করা।
বিশ্ববিদ্যালয় এরিয়াকে গ্রিন, ইয়োলা এবং রেড জোনে ভাগ করে যানবাহন ও বহিরাগত নিয়ন্ত্রণ (গ্রিন জোন, ঢাকা মেডিকেল, বাংলা একাডেমি ইত্যাদি জনবহুল জায়গা, ইয়ালা জোন- অডিটোরিয়াম এর মতো এরিয়া যেখানে ফেস্ট অ্যালামনাই ব্যক্তিবর্গ যথাযথ পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে প্রবেশ করতে পারবে, রেড জোন- আবাসিক ও একাডেমিক এরিয়াগুলোতে বহিরাগতদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ)।
কল্যাণপুর ডিপোর ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে একাধিক ডিপো হতে যানবাহন সরবরাহ করে দক্ষ চালক এবং যানবাহন সংকট দূরীকরণ।
প্রতিটি বাসে বাধ্যতামূলকভাবে জিপিএস ট্র্যাকার স্থাপন করে একটি মোবাইল অ্যাপস চালু করা, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাসের লাইভ লোকেশন ও সময়সূচি জানতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রুটে যান চলাচল ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য সকল যানবাহনের ফিটনেস নিয়মিতভাবে চেকিং করা।
ক্যাম্পাসে যানজট কমাতে সাইকেল ও পরিবেশবান্ধব যাতায়াতকে অগ্রাধিকার দেওয়া, নিরাপদে হাঁটার জন্য ফুটপাত ও অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলো সংস্কার করা।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.