নেপালে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী দেশটিতে আটকা পড়েছেন। এছাড়া আটকা পড়েছেন জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়সহ হাজারও বাংলাদেশি নাগরিক।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে কাঠমান্ডুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের ৫০ জন শিক্ষার্থী একটি প্রশিক্ষণে নেপালে গিয়েছিলেন। এদের মধ্যে সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা রয়েছেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়সহ মোট ৩২ জনের একটি দল আটকা পড়েছে। এমনকি ১০-১২ জন ক্রীড়া সাংবাদিকও সেখানে আটকা পড়েছেন। কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে এসব বাংলাদেশির দেশে ফেরার কথা থাকলেও পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় তারা দেশে ফিরতে পারেননি। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিকেল ৩টার নির্ধারিত ফ্লাইটে ঢাকায় ফেরার কথা ছিল তাদের।
সূত্র জানায়, নেপাল ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে তারা নিরপদে বিমানবন্দরে যেতে পারবেন। যদিও বাংলাদেশ দূতাবাস তাদের নিরাপত্তায় দেশটির সেনাবাহিনীর পাহারা চেয়েছিল। তবে আন্দোলন ও সংঘর্ষের কারণে সেই পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। এর আগে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ ফুটবল দলের কয়েকজনের পাসপোর্ট তাদের কাছে পৌঁছে দিতে গেলে গাড়িতে হামলার শিকার হচ্ছিলেন। তবে নেপাল পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) জানায়, নেপালে পরিস্থিতির কারণে দলের ফিরতি যাত্রা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া এক হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ট্যুরিস্ট বর্তমানে দেশটিতে রয়েছেন বলে ধারণা করছে দূতাবাস। দেশটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করা বাংলাদেশি সংখ্যা ৫০-৬০ জন বলেও জানা গেছে। দেশটিতে অবস্থানরত সব বাংলাদেশি নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছে দূতাবাস।
কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে বাংলাদেশের একজন নারী পর্যটকের পাসপোর্ট পুড়ে গেছে। তিনি স্থানীয় এক নেপালি নাগরিকের বাসায় অবস্থান করছেন। এ অবস্থায় দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাকে উদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছে। আর কোনো বাংলাদেশির ক্ষয়ক্ষতির খর পাওয়া যায়নি।
দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত নেপালের মানুষ টুরিস্টদের অন্যরকম দেখে। সেই ধারণা থেকেই বেশকিছু টুরিস্টবাস চলাচল করছিল। ওই বাংলাদেশি নারী পর্যটক অন্যান্য দেশর কয়েকজন ট্যুরিস্টের সঙ্গে তেমনই এক বাসে বিমানবন্দরে যাচ্ছিলেন। আজ তার দেশে ফেরার কথা ছিল। কিন্তু পথে আন্দোলনকারীরা তাদের নামিয়ে বাসটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাসে থাকা ওই নারীর পাসপোর্ট ওই ঘটনায় পুড়ে যায়। পরে তিনি স্থানীয় এক নেপালির বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই নেপালি বাংলাদেশ দূতাবাসে ফোন করে যোগাযোগ করেন।
দূতাবাসের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, আমরা তাকে জানিয়েছি, আজ যে পরিস্থিতি তাতে তাকে উদ্ধার করা সম্ভব নয়। তবে ওই ব্যক্তিকে অনুরোধ করেছি যাতে তিনি বাংলাদেশি নারীকে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করেন। আমরা সুযোগ পেলেই তাকে উদ্ধার করে বাংলাদেশ দূতাবাসের এমন কোনো কর্মকর্তার বাসায় রাখবো, যার পরিবার এখানে রয়েছেন।
বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানায়, কাঠমান্ডুতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন এমন বাংলাদেশির সংখ্যা খুব বেশি হলে ৫০-৬০ জনের মতো। তবে দেশটিতে নিয়মিত বাংলাদেশি পর্যটক আসেন।
এক দূতাবাস কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যারা পর্যক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আসেন তারা সাধারণত দূতাবাসে নিবন্ধন করায় না। এজন্য পর্যটকরে সঠিক সংখ্যা বলা কঠিন। তবে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিনের ফ্লাইট চলাচল থেকে ধারণা করা যায় প্রায় ৩০০ থেকে ৩৫০ জন বাংলাদেশি নেপালে প্রবেশ করেন। সেই হিসাবে গত তিনিদিনে অন্তত এক হাজার পর্যটক দেশটিতে প্রবেশ করেছেন।
নেপালে অবস্থানরক এসব বাংলাদেশি যেন অযথা বাইরে বের না হন এবং নিজেদের হোটেল বা অবস্থানস্থলে অবস্থান করেন। একই সঙ্গে নেপালে ভ্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে এমন (ইনবাউন্ড) যাত্রীদেরও বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশটিতে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস দুটি হটলাইন চালু করেছে। নম্বর দুটি হলো: +৯৭৭ ৯৮০৩৮৭২৭৫৯ এবং +৯৭৭ ৯৮৫১১২৮৩৮১।
দূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত আমার প্রায় সাড়ে তিনশ ফোন কল পেয়েছি। তাদের বেশির ভাগেই বাংলাদেশি টুরিস্ট। তারা সবাই পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.