বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে আলোচিত ইসলামী বক্তা মাওলানা মুফতি আমির হামজা’কে সতর্ক করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলের পক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির দুইজন দায়িত্বশীল বিতর্কিত কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য না দেওয়ার জন্য তাকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে আমির হামজা গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
২২ সেপ্টেম্বর (সোমবার) বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীতে পশ্চিম ফারিরবিল তরুণ আদর্শ ইসলামি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ২য় তম তাফসীরুল কুরআন মাহফিলে প্রধান বক্তা হিসেবে অংশ নিবেন তিনি।
বর্তমানে কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করছেন আমির হামজা। রবিবার সকালে তিনি কক্সবাজার এসে পৌঁছান, সদর উপজেলার বাংলাবাজারে আজ একটি মাহফিলে তার অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও
বৈরি আবহাওয়ার কারণে সেটি স্থগিত করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গে সম্প্রতি ওয়াজ মাহফিলে করা বিতর্কিত তাঁর দুটি মন্তব্য সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
আমির হামজা এ প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে বলেন, ‘ অনেক সময় তুলনা দিতে গিয়ে উদাহরণ টেনে এনে কথা বলতে হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে কারো মনে আঘাত লাগে এমন কথা কখনো বলিনি, তবুও ভুল হয়েছে। আমার দল আমাকে সতর্ক করেছে, সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন থেকে কুরআনের তাফসির ছাড়া আরকিছুই বলব না।’
পতিত আওয়ামীলীগ আমলে জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে হামজা বলেন, ‘ আমি আওয়ামীলীগের সময় জেল কেটেছি, এখনো আমি শারীরিক-মানসিক ভাবে স্বাভাবিক হতে পারিনি। একরকম ট্রমা কাজ করে তাই ভুল হয়ে যায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ হলের নাম বলতে গিয়ে ভুলে মহসিন হল বলেছেন দাবী করে তিনি বলেন, ‘ মুখ ফসকে এমন কথা বলেছি, যার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি। কিন্তু ছাত্রলীগ যে মহসিন হলে নির্যাতনের রেকর্ড করেছে সে কথা তো আর মিথ্যা নয়।’
সম্প্রতি এক মাহফিলে ‘গত ১৬ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হলে আজান দিতে দেওয়া হয়নি’ দাবি করে বক্তব্য রাখেন আমির হামজা।
ফেসবুক সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুফতি আমির হামজার দেওয়া সে বক্তব্যের ভিডিও ভাইরাল হয়।
ভিডিওতে আমির হামজা বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে ১৬ বছর আজান দিতে দেয়নি জালেমরা। ছাত্রলীগের ভাইদের ঘুমের ডিস্টার্ব হবে বলে ফজরের আজান দিতে দিত না। এবার ডাকসুতে শিবির প্যানেল জয়ী হওয়ার পর পরদিনই আজান আরম্ভ হয়েছে, আল্লাহু আকবার।’
এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বলে জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
আপ বাংলাদেশের সংগঠক ও ঢাবি শিবিরের সাবেক সভাপতি রাফে সালমান রিফাত নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে মুফতি আমির হামজার উদ্ভট, অসত্য বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
অন্যদিকে ভাইরাল হওয়া আরেকটি ভিডিওতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি জাহাঙ্গীরনগরে প্রথম ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখানে দেখেছি, সকাল বেলা কুলি করছেন মদ দিয়ে। ছাত্র পেটাচ্ছে শিক্ষককে।’
এই বক্তব্য ‘সত্য নয়’ দাবী করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্বাক্ষরিত ঐ বিবৃতিতে বলা হয়,’ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১১ সালে ‘জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ’ চালু হয় এবং ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে এই বিভাগে প্রথম শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়। সুতরাং তিনি জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হওয়ার যে তথ্য প্রকাশ করেছেন, তা সত্য নয়। ‘
এছাড়াও বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আবাসিক হলগুলোতে সকালে ‘মদ’ দিয়ে কুলি করার প্রত্যক্ষ করার বর্ণনাটিও তাঁর মনগড়া, যা অসত্য। প্রমাণসহ এমন নজির প্রশাসনের কাছে নেই। ছাত্ররা শিক্ষকদের লাঠি দিয়ে পেটানোর তাঁর বক্তব্যটি সত্যের অপলাপ মাত্র। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্তঃসম্পর্কের বন্ধন সব সময়ই প্রশংসনীয়।’
এ প্রসঙ্গে আমির হামজা বলেন, ‘ আমি তো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ছিলাম। ওই ক্যাম্পাসে কি হতো সবাই জানে। আমি কি অপরাধ করলাম। এখন বলেছে মদের বোতলে পানি খায়। আমি কি জানি! যদি তাই হয় আমি দুঃখিত। আমি এসব নিয়ে আর কিছুই বলব না।’
মুফতি আমির হামজার বাড়ি কুষ্টিয়ায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আল কুরআন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অনার্স-মাস্টার্স করেছেন তিনি।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে আমির হামজার নাম ঘোষনা করা হয়েছে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.