বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে দেশটির রাখাইন রাজ্যে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গা অপেক্ষায় রয়েছে। তারা সুযোগ পেলেই যেকোনো সময় বাংলাদেশে ঢুকে পড়তে পারে। এমনটা হলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে মানবিক ও নিরাপত্তা সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে।
কক্সবাজারের ক্যাম্পে আরাকানের বুথিডং থেকে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা যুবক সেলিমের সঙ্গে কথা হয়। সেলিম জানান, নিজে বাঁচলেও আরাকান আর্মির নির্যাতনে মাসহ পরিবারের তিন সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের একটি ঘরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বসবাস করা অনেকেই এখনো আরাকান আর্মির নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের কারো হাত, কারো পা কেটে নেয়া হয়েছে। আবার কেউ কেউ চিরদিনের মতো পঙ্গু হয়ে গেছেন। আট বছর আগে মিয়ানমার সামরিক জান্তা আর রাখাইনদের নির্যাতনে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলো। রোহিঙ্গারা অভিযোগ করেন, জান্তা সরকারের দেখানো পথেই আরাকান আর্মি হাঁটছে। নির্যাতনের পর আরাকান আর্মি নাগরিক সনদসহ প্রয়োজনীয় দলিল কেড়ে নিচ্ছে।
সম্প্রতি রাখাইনে একটি গণকবরের সন্ধান মেলে। সেখানে শত শত রোহিঙ্গাকে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। এদিকে, বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিগত ও ধর্মীয় বিরোধ না মিটলে এমন পরিস্থিতির উত্তরণের পথ প্রায় অসম্ভব।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, সামরিক বা নির্বাচিত যে সরকারই থাকুক না কেন তাদের অবস্থানের পরিবর্তন না হলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। আফগানিস্তান, প্যালেস্টাইন ও ইউক্রেনের শরনার্থীরাও তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আরাকান আর্মির নির্যাতনে গত এক বছরে প্রায় দুই লাখের মতো রোহিঙ্গা নতুন করে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে এখনও সীমান্তে অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়লে বাংলাদেশকে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। অন্যদিকে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আরো অর্ধলক্ষ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কার কথা জানিয়েছে প্রত্যাবাসন কমিশন।
শরণার্থী, ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কমিশনার মিজানুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের সীমান্তে বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এটি আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিনিয়ত বর্ডারে দিয়ে মাদক, অস্ত্র প্রবেশসহ অপরাধমূলক কার্যক্রম হচ্ছে। সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনী সবসময় এটির মুখোমুখি হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নাফ নদীর ওপারে আরাকানের মংডু টাউনশীপ এলাকা অবস্থিত। সেখান থেকেই ৮ বছর আগে অভ্যন্তরীণ সংঘাত, জান্তা সরকার ও রাখাইনদের নির্যাতিনের শিকার হয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। সেই ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। ফলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু না করা গেলে ফের বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের ঢল নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.