রোহিঙ্গাদের জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) তহবিল নভেম্বরের মধ্যেই ফুরিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির উপ-নির্বাহী পরিচালক ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) কার্ল স্কাউ। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মানুষের জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে বিশ্বব্যাপী সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
কার্ল স্কাউ বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই। তাদের কাজ করার সুযোগ নেই, স্থানীয় সমাজে মেশার সুযোগ নেই, আবার নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে রাখাইনেও ফিরে যাওয়ারও উপায় নেই। ফলে তারা আমাদের সহায়তার ওপর শতভাগ নির্ভরশীল।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কার্ল স্কাউ আরও বলেন, ‘অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি, যখন সহায়তা দেওয়া বন্ধ করা কিংবা কমিয়ে আনা হয়, তখন বাধ্য হয়ে মানুষ নেতিবাচক উপায়ে বেঁচে থাকার পথ খোঁজে।’
সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের মানুষের উদারতা ও কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহযোগিতার প্রশংসা করেন স্কাউ। তিনি বলেন, ‘আমরা সর্বদা আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়গুলোতে বিনিয়োগ করি। রোহিঙ্গাদের জন্য যে খাদ্য সরবরাহ করা হচ্ছে, তা কক্সবাজারসহ বাংলাদেশ থেকেই সংগ্রহ করা হয় যাতে এ দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হয়।’
‘কিন্তু আমাদের তহবিল ফুরিয়ে আসছে। নভেম্বরের পর এই সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার মতো তহবিল আমাদের হাতে নেই।’
এ কারণেই বাংলাদেশের সরকার, অংশীদার, দাতা ও ডব্লিউএফপির মাঠকর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে বাংলাদেশ সফর করছেন বলে জানান সংস্থাটির উপ-নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, ‘মাসিক ভিত্তিতে আমরা ক্যাম্পের সব মানুষের জন্য খাদ্য সরবরাহ করি। এটি বন্ধ হলে মানুষ যে শুধু ক্ষুধার কারণেই ভুগবে তা নয়, বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়বে। জীবিকার সন্ধানে অনেকে ক্যাম্প ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হবেন।’
তহবিল সংকটের মতো গুরুতর সংকট মোকাবিলায় ডব্লিউএফপি এখন কী ভাবছে, এমন প্রশ্নের উত্তরে কার্ল স্কাউ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের জন্য তহবিল সংকট মোকাবিলায় অর্থের জোগানে নানা পথ নিয়ে ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করা যায় কিনা, সে বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।’
‘রোহিঙ্গাদের জন্য এ পর্যন্ত পাওয়া মোট সহায়তার প্রায় ৬০ শতাংশ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন অন্য দেশগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আসিয়ানভুক্ত দেশ, সৌদি আরব, কাতার, আমিরাতসহ উপসাগরীয় অঞ্চল ও ওআইসির সদস্যদেশগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ করছি।’
‘এই পরিস্থিতির জন্য রোহিঙ্গারা দায়ী নয়। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের ওপর নির্ভর করার দাবি রাখে তারা।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা চালিয়ে যেতে আগামী ছয় মাসে জরুরি ভিত্তিতে ৬০ মিলিয়ন ডলার এবং আগামী এক বছরে মোট ১৬৭ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি রোধে জরুরি ভিত্তিতে অর্থায়নের জন্য সব অংশীদারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
কার্ল স্কাউ বলেন, ‘এ ব্যাপারে কার্যকারিতা, দক্ষতা ও স্বনির্ভরতা বাড়িয়ে স্থানীয় সম্প্রদায়গুলোকে সমর্থনসহ আরও কিছু করার জন্য যা যা করতে পারি তা করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।’
‘আমাদের কার্যক্রম খুবই কার্যকর। এখন প্রতি ডলার থেকে ৮২ সেন্ট সরাসরি রোহিঙ্গাদের সহায়তায় যাচ্ছে। বিভিন্ন খরচ কমিয়ে শুধু ঢাকা অফিস থেকেই প্রায় ১৯ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।’
১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে কাজ শুরু করে ডব্লিউএফপি। এখন এটি সংস্থাটির অন্যতম বৃহৎ কার্যক্রম, যেখানে বার্ষিক বাজেটের পরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
এতে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর জন্য জরুরি ত্রাণ সহায়তা ছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত।
ইউএনবিকে স্কাউ বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বিষয় নিয়ে (বাংলাদেশ-ডব্লিউএফপি সম্পর্ক) প্রায়ই খবরের শিরোনাম হলেও এখানে আমাদের অংশীদারত্ব ও কার্যক্রম আরও বিস্তৃত। ৫০ বছরের ক্রমবর্ধমান অংশীদারত্বের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারার অংশ হতে পেরে আমরা অত্যন্ত গর্বিত।’
তিনি বলেন, ‘স্কুল মিল প্রোগ্রামসহ জলবায়ু অভিযোজন, সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা ও খাদ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে ডব্লিউএফপি বাংলাদেশের পাশে আছে।’
‘স্কুল মিল প্রোগ্রাম শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ও শিক্ষার মান বাড়ায়, পুষ্টি উন্নত করে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকেও সক্রিয় করে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও নাইজেরিয়ার অভিজ্ঞতা থেকেও ইতিবাচক ফল মিলেছে।’
সম্প্রতি পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন স্কাউয়ের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশের শিশুদের অপুষ্টি মোকাবিলায় স্কুল মিল প্রোগ্রামে আরও জোর দেওয়ার আহ্বান জানান।
স্কাউ জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তারা অংশ নেবেন।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সরকারের কাছ থেকে আসা ইতিবাচক এবং সহায়ক বার্তাগুলো নিউ ইয়র্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ওই বৈঠকের মঞ্চ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’
তিনি বলেন, গাজা, ইউক্রেন, সুদানের মতো নানা বৈশ্বিক সংকটের কারণে বর্তমানে মনোযোগ ও সম্পদের প্রচুর প্রতিযোগিতা চলছে। তাই বাংলাদেশ ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতিকে আলোচ্যসূচির শীর্ষে রাখতে হবে।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, বৈশ্বিকভাবে ডব্লিউএফপির তহবিল ৪০ শতাংশ কমে গেছে এবং বিভিন্ন দেশে কার্যক্রমে বড় ধরনের কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.