চোখে মুখে বয়সের ছাপ, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ আর হাতে ছাতা তবে শরীরে নেই ক্লান্তি। নাম রবীন্দ্র লাল মিত্র। জন্ম তার চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের দক্ষিণ সমুরা গ্রামে। আট বছর বয়সে বাবা নিরঞ্জন লাল মিত্রকে হারান তিনি। বাবা না থাকার পরও কোনো রকমে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্য তিনি দ্বিতীয়। বড় ভাই পরিমল লাল মিত্র চট্টগ্রামের কে সি দে রোডে পত্রিকা বিক্রি করতেন। তাকেও কাজে লেগে পড়তে হয় কিশোর বয়সেই। চট্টগ্রামের একটি প্রেসে চাকরি নেন মাত্র পাঁচ টাকা বেতনে। বিয়ে করেন সে সময়ই।
রবীন্দ্র মিত্রর চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রতিদিন ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়েন পত্রিকা বিলি করতে। হাঁটেন প্রায় ২২ কিলোমিটার, কখনো রোদের মধ্যে, কখনো ঝুম বৃষ্টিতে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী (এনআইডি) তার বয়স ৮৩ বছর। তবে বয়স্ক ভাতার বই অনুযায়ী আরও বেশি। তিনি নিজে বলেন, এনআইডির তথ্যে ভুল আছে, তার প্রকৃত বয়স ৯৩ বছর।
৮৩ বছর বয়সী রবীন্দ্র মিত্র দীর্ঘ ছয় দশক ধরে করছেন এই কাজ। ছাপা পত্রিকার গ্রাহক কমায় তার আয়ও কমেছে। মুঠোফোনে মানুষ সংবাদ পেয়ে যাওয়ায় হতাশ তিনি। তার মতে, পত্রিকা হাতে নিয়ে পড়ার আনন্দ থেকে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন। চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রতিদিন সকাল সাতটার আগেই পটিয়ার গৈড়লার টেকে পৌঁছান রবীন্দ্র মিত্র। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে গৈড়লা হাই স্কুল, ঘোষের হাট, তেকোটা, মুকুটনাইট, ধলঘাট ক্যাম্প, খানমোহনা হয়ে কেলিশহর ভট্টাচার্য হাট, দারোগাহাট পর্যন্ত অন্তত ২২কিলোমিটার হাঁটেন। এক হাতে থাকে পত্রিকা, আরেক হাতে ছাতা, কাঁধে একটি কালো ব্যাগ। পরনে ধূসর হাফ শার্ট ও লুঙ্গি। লম্বা সাদা চুল আর গোঁফ-দাড়ির কারণে মানুষ রবীন্দ্র মিত্রকে ‘সাধু’ বলে ডাকে।
রবীন্দ্র মিত্র জানান, তিনি দীর্ঘ ৪০ বছর প্রেসের চাকরিতে কাটানোর পর বাধ্য হয়ে তা ছেড়ে দেন, এ কাজ খুবই কষ্টের ছিল। এরপর পত্রিকার হকার হিসেবে কাজ শুরু করেন। তখন থেকেই শুরু হয় গ্রামে গ্রামে হেঁটে পত্রিকা পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব। বৃদ্ধ রবীন্দ্র মিত্র এখন থাকেন চট্টগ্রাম শহরে মেয়ের বাসায়। সেখান থেকে বাস ধরে ছুটে যান পটিয়ায়। এরপর শুরু হয় হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি।
রবীন্দ্র মিত্রর বড় ভাই পরিমল লাল মিত্র চট্টগ্রামের কে সি দে রোডে পত্রিকা বিক্রি করতেন। ভাইয়ের কাছ থেকেই প্রথমে ৩০-৩৫টি পত্রিকা নিয়ে শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে তা বেড়ে একসময় দাঁড়ায় ২৫০টিতে। মাস শেষে তার আয় হতো ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। একসময় ভালো আয় হলেও এখন ছাপা পত্রিকার দুর্দিনে রবীন্দ্র মিত্রর আয় কমেছে। এখন তিনি জাতীয় ও স্থানীয় মিলিয়ে প্রায় ১৫০টি পত্রিকা বিক্রি করেন। কিন্তু মাস শেষে হাতে থাকে মাত্র আট হাজার টাকার মতো।
তিনি বলেন, অনলাইন চালু হওয়ায় এখন অনেকে আর পত্রিকা কেনেন না। কিন্তু গ্রামের মানুষ এখনো খাঁটি খবর ছাপা কাগজেই খোঁজে। তাই চট্টগ্রাম শহর থেকে বাস ধরে পটিয়া গিয়ে প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিক্রি করেন। এটা এখন তার কাছে নেশার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। গ্রামের পথে পথে হাঁটতে ভালো লাগে তার।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.