বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) প্রায় ২০ কর্মকর্তা ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা) নিয়ে সিটিং অ্যালাউন্স হিসেবে নিয়েছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা। অথচ তারা সবাই সরকারি বেতনভুক্ত কর্মকর্তা, যাদের মূল দায়িত্ব শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাই করা। সংশ্লিষ্টদের মতে, নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের এমন অ্যালাউন্স গ্রহণ জনগণের টাকার অপচয় ছাড়া কিছু নয়।
এনটিআরসিএর বিধি অনুযায়ী, সংস্থাটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রার্থী বাছাই করে—কাজের ধরণ অনেকটা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) মতো। তবে পিএসসিতে অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তারা ভাইভা নিলেও কোনো সিটিং অ্যালাউন্স পান না, কেবল খাবারের জন্য সামান্য খোরাকি দেওয়া হয়। বাহির থেকে আসা বিশেষজ্ঞরা অবশ্য সম্মানী পান।
এনটিআরসিএ বলছে, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে মিটিং বা ভাইভা নিলে সিটিং অ্যালাউন্স নেওয়ার নিয়ম আছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষেই তারা অ্যালাউন্স নিয়েছে। তবে পিএসসির মতো অন্যান্য নিয়োগ সংস্থায় এই প্রথা নেই।
জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) এরাদুল হক দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘সব সংস্থাই মিটিং কিংবা পরীক্ষার ভাইভা নেওয়ার জন্য সিটিং অ্যালাউন্স নেয়। আমরাও নিয়েছি। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি রয়েছে।’ এনটিআরসিএর বিধিতে বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে কি না এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ‘সবকিছু বিধিতে উল্লেখ করার প্রয়োজনীয়তা নেই।’
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৮তম নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষার জন্য ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন প্রার্থীকে নির্বাচিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৮১ হাজর ২০৯ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। প্রতিদিন ১০টি বোর্ডে ৬০০ প্রার্থীর ভাইভা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি বোর্ডে তিনজন করে কর্মকর্তা ছিলেন। এর মধ্যে দুইজন এনটিআরসিএর কর্মকর্তা এবং একজন বাহির থেকে আসা বিশেষজ্ঞ।
২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ১৮তম নিবন্ধনের ভাইভা শুরু হয়েছিল। যা শেষ হয় চলতি বছরের ৩১ মে। এ সময় ১৩৯ কার্যদিবস নিবন্ধনের ভাইভা নিয়েছে সংস্থাটি। প্রতি কার্যদিবসে ভাইভা নিতে পাঁচ হাজার টাকা করে সিটিং অ্যালাউন্স নিয়েছেন এক্সটার্নাল এবং ইন্টার্নালরা। সে হিসেবে একেকজন কর্মকর্তা ভাইভা নিয়ে নিজ বেতনের বাইরে ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা করে নিয়েছেন।
তথ্য অনুযায়ী, ১৮তম নিবন্ধনের প্রথম ধাপের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৭ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। এ দাপে ১৫ কার্যদিবস মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ১৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর ১৫ কার্যদিবস, তৃতীয় ধাপে ৫ ডিসেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি ১৫ কার্যদিবস, চতুর্থ ধাপে ৫ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি ১৫ কার্যদিবস, ৫ম ধাপে ২৬ জানুয়ারি থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৫ কার্যদিবস, ৬ষ্ঠ ধাপে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৬ মার্চ ১৫ কার্যদিবস, ৭ম ধাপে ৯ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ২৮ কার্যদিবস এবং ৮ম ধাপে ৪ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ১৯ কার্যদিবস মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২৩ মার্চ এবং ৩১মে দুইদিন অতিরিক্ত ভাইভা নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ১৮তম নিবন্ধনে ১৩৯ কার্যদিবস ভাইভা নিয়েছে সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য আগে থেকেই আলাদা বেতন ও ভাতা থাকলেও, ভাইভা নেওয়ার নামে এ ধরনের বাড়তি অর্থ গ্রহণ বিধিবহির্ভূত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের মূল দায়িত্ব হলো পরীক্ষার মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা, ফলে ভাইভা নেওয়ার জন্য আলাদা সিটিং অ্যালাউন্স নেওয়ার এখতিয়ার নেই।
জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ( অভ্যন্তরীণ নীরিক্ষা) নাসিমা পারভীন দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘এনটিআরসিএ অর্থ বিভাগের অনুমতি নিয়ে সিটিং অ্যালাউন্স নিচ্ছে নাকি নিজেরাই নিচ্ছে সেটি আমি নিশ্চিত নই। বিষয়টি আগে খতিয়ে দেখতে হবে। এ ছাড়া আমরা হয়তো একটি অর্থ দিলাম, তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই অর্থ তাদের দেবে কি না সেটিও দেখার বিষয় রয়েছে।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব (বাজেট) ড. মোর্শেদা আক্তার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পরে বলতে পারব।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.