“জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে গণমানুষের উদারতার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান আমলের বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালাচ্ছে জামায়াত।"
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ‘৩৬ জুলাই: আমরা থামবো না’ শীর্ষক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার টিএসসিতে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত নেতাদের ছবির প্রদর্শনী করে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। পরে প্রতিবাদের মুখে সেসব ছবি সরিয়ে নেওয়া হয়।
জামায়াতে ইসলামীকে ‘মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার দায়’ স্বীকার করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ৩২ জন নাগরিক।
তারা বলেছেন, "জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জামায়াতে ইসলামী অখণ্ড পাকিস্তানের দাবিতে সভা-সমাবেশ করেছে, প্রচার চালিয়েছে। এমনকি ২৫ মার্চ বর্বর গণহত্যার পর পাকিস্তান জান্তার সঙ্গে বৈঠকও করেছে দলটির নেতারা। তাদের দলের নেতা-কর্মীরা পাকিস্তানি সামরিক জান্তার পক্ষে রাজাকার, আলবদরসহ বিভিন্ন বাহিনিতে যুক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধর্ষণ, লুণ্ঠন, গণহত্যায় সহযোগিতা করেছে বলে পরিষ্কার তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।"
"বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইসলামী ছাত্র সংঘ নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ছাত্রশিবির নামে রাজনীতি শুরু করে। তবে তাদের মূল দল জামায়াতে ইসলামী একই নামে স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার কারণে তারা কখনো ক্ষমা প্রার্থনা, অনুশোচনার প্রকাশ ঘটায়নি। উল্টো বিভিন্ন ভাবে মুক্তিযুদ্ধকে ভুল প্রমাণের চেষ্টা চলিয়েছে।"
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের গ্র্যান্ড ভ্যালি স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আজফার হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রায়হান রাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জি এইচ হাবীব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আ-আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সায়মা আলম, অধ্যাপক আর রাজী, লেখক সায়েমা খাতুন, কবি কাজল শাহনেওয়াজ, লেখক রাখাল রাহা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারুফ মল্লিক।
কবি অর্বাক আদিত্য ও সালাহ উদ্দিন শুভ্র বিবৃতিটি সংবাদমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিবৃতিদাতারা।
তারা বলেছেন, "স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সময়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়তের প্রথম সারির প্রায় সব নেতাকে অভিযুক্ত করা হয়। যে প্রক্রিয়ায় তখন তাদের বিচার হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, এসব মামলার রায়ে জবরদস্তিমূলকভাবে কারো ফাঁসি অথবা যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। সেই অভিযোগ বিবেচনায়, এসব মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পুনর্বিচার জরুরি।"
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সংঘটিত অপরাধকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে’ ব্যবহার করেছে বলে মনে করছেন বিবৃতিদাতারা।
তারা বলছেন, "এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদেরও বিচারের আওতায় আনা উচিত। রাজনৈতিক মহলে এটা প্রতিষ্ঠিত যে, একই সময়ে শাহবাগে জমায়েত তৈরি করে গণজাগরণ মঞ্চ আওয়ামী লীগের কতৃত্ববাদী শাসনের ভিত তৈরি করেছিল। এসব অভিযোগেরও যথাযথ তদন্ত এবং বিচার জরুরি “
সেই সঙ্গে তারা এও বলেছেন, "বিচার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত থাকলেও, তার মানে এই নয় যে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নেতাকর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে মানবাতা বিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত ছিল না।"
বিবৃতিতে বলা হয়, "জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট শাসন উচ্ছেদ করেছে। সেখানে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়েও কেউ প্রশ্ন করেনি। তবে সফল অভ্যুত্থানের পর থেকে জামায়াত এবং তার সহযোগী ছাত্রশিবির মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করা, গণহত্যাসহ অন্যান্য অভিযোগে ঐতিহাসিকভাবে অভিযুক্তদের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক করতে চাইছে।
"পাকিস্তানি শাসকরা তখন মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় যে ভাষায় কথা বলত, সেই একই বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আওয়ামী লীগের মত ‘শাহবাগী’ ইত্যাদি ট্যাগিংয়ের রাজনীতি ফিরিয়ে আনছে। তাদের এ ধরনের উদ্দেশ্য, তৎপরতা ইতিহাসের সঙ্গে বেঈমানি, রাজনৈতিক অসততা।"
বিবৃতিদাতারা বলছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে প্রকাশ্যে ও সংগঠিতভাবে জনগণের মুক্তি সংগ্রামের বিরোধিতা করার পরও কোনো রাজনৈতিক দল অনুশোচনা বা ক্ষমা চাওয়া ছাড়াই অবাধে রাজনীতি করছে এমন নজির ‘চোখে পড়ে না’।
“শুধু তাই নয়, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে গণমানুষের উদারতার সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান আমলের বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও চালাচ্ছে জামায়াত। তাদের এ চর্চা জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়।"
জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের স্বার্থে জামায়াতে ইসলামীর কাছে এ ধারার রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।
তারা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতার রাজনৈতিক দায় শিকার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কয়েক লাখ মানুষের শহীদি আত্মত্যাগ ও সম্ভ্রমের প্রতি অবশ্যই তাদের শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে।”
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে আরো রয়েছেন–অধ্যাপক সৌভিক রেজা, অধ্যাপক গোলাম সরওয়ার, শিল্পী দেবাশীষ চক্রবর্তী, নির্মাতা আশফাক নিপুণ, আবহওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ, কথাসাহিত্যিক ও প্রকাশক মোহাম্মদ নাজিমউদ্দিন, কথাসাহিত্যিক গাজী তানজিয়া, তাসনিম আফরোজ ইমি, পারভেজ আলম, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট চিনু কবির, কবি ফেরদৌস আরা রুমী, বিথী ঘোষ, কবি মোহাম্মদ রোমেল, প্রকাশক সাঈদ বারী, মাহাবুব রাহমান, লেখক সালাহ উদ্দিন শুভ্র, কবি অর্বাক আদিত্য, লেখক আরিফ রহমান, সোয়েব মাহমুদ, অস্ট্রিক আর্যু, সাদিক মাহবুব ইসলাম।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.