জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব, বিদেশি লবণ আমদানির চাপ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্রমাবনতি উপকূলীয় অঞ্চলের হাজারো লবণচাষি ও জেলেদের জীবন জীবিকাকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। একদিকে চাষযোগ্য জমিতে শিল্পকারখানা গড়ে উঠছে, অন্যদিকে নদী ও সাগরের পানির দূষণ এবং জলজ জীববৈচিত্র্যের ঘাটতি মৎস্যজীবীদের আয়ের পথ সংকুচিত করে ফেলছে।
এই বাস্তবতায় কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নে লবণ ও মৎস্যজীবীদের সুরক্ষা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় নির্ধারণে এক বিশেষ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) রাত ৮টায় রাজাখালী সিকদার পাড়া চৌরাস্তার মোড়ে লবণ মৎস্য ও কৃষি কল্যাণ সমিতি (রাজাখালী শাখা) এই সভার আয়োজন করে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সমিতির ইউনিয়ন সভাপতি আবদুল হালিম। প্রধান আলোচক ছিলেন পরিবেশ কর্মী ও পেকুয়া উপজেলা সমিতির সদস্য সচিব দেলওয়ার হোসাইন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য নজরুল ইসলাম, অভিজ্ঞ লবণচাষি সোলাইমান ও জাফর আহমদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
বক্তারা জানান, লবণ উৎপাদনে খরচ বেড়ে গেলেও উৎপাদিত লবণের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অধিকাংশ চাষি এখন লোকসানে পড়ছেন। ফলে অনেকেই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং আগামী মৌসুমে চাষ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে একদিকে লবণ উৎপাদন হ্রাস পাবে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান হারিয়ে পড়বে বিশাল জনগোষ্ঠী বিপাকে।
এছাড়া দেশে যখন নিজস্ব উৎপাদন দিয়ে চাহিদা পূরণ সম্ভব, তখন বিদেশ থেকে লবণ আমদানিকে চাষিরা “প্রতিযোগিতার নামে বৈষম্য” হিসেবে উল্লেখ করেন। তাঁরা বলেন, দেশের চাষিরা যেখানে প্রতিকূল পরিবেশে উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন, সেখানে বিদেশি লবণের সস্তা আমদানি তাঁদের জীবনধারায় ধ্বংস ডেকে আনছে।
অন্যদিকে নদী ও সাগরের পানির দূষণ, নাব্যতা সংকট ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সামুদ্রিক মাছ, বিশেষ করে ইলিশ, এখন আর সহজলভ্য নয়। মৌসুমে মাছ ধরতে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন জেলেরা। ফলে ভরা মৌসুমেও তারা পরিবারের চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছেন। অনেকে বিকল্প পেশায় ঝুঁকছেন, যার ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী মৎস্যজীবী সংস্কৃতি।
সভায় লবণচাষি ও জেলেরা সরকারের প্রতি ১৫ দফা দাবি উত্থাপন করেন। বক্তারা জানান, দাবিগুলো আদায়ের লক্ষ্যে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে বৃহত্তর জনসমাবেশের আয়োজন করা হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাদশা, সহ-সাধারণ সম্পাদক ফজল কাদের, সদস্য জোবাইর আহমদ, মোঃ ফরিদ, বেলাল, জাহাঙ্গীর, শাহাদাত, জাকেরসহ অর্ধশতাধিক লবণচাষি ও জেলে।
সবার একটাই আহ্বান—“উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কথা শুনুন, নীতিনির্ধারণ হোক বাস্তবতার আলোকে।”