বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক এমপি এ কে এম শামীম ওসমান, কৃষক লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ, সিদ্ধিরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক প্রশাসক আব্দুল মতিন প্রধান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নাসিক ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও নাসিক ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শাহজালাল বাদলের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন মোহাম্মদ সজিবের পিতা মোঃ সালাউদ্দিন। শহীদদের গেজেটের তালিকায় শহীদ সজিবের ক্রমিক নং ৫৩৬।
প্রায় ১ বছর দেড় দশ মাস পর ছেলেকে হত্যার অভিযোগ এনে মোঃ সালাউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ আদালতে মামলার আবেদন করলে আদালতের নির্দেশে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি এফেয়ার হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়। মামলায় একশ থেকে দেড়শ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি (নং- ২১৫/২৫) দায়ের করা হলেও বিষয়টি আজ রোববার নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলম।
শহীদ সজিবের পিতা মোঃ সালাউদ্দিন মামলায় উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলস্থ আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটের বিক্রমপুর হার্ডওয়ার নামক দোকানে কর্মচারী হিসেবে চাকুরী করতো। ঘটনার দিন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাজারো ছাত্র-জনতা ঘটনাস্থল এলাকায় দাবী আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিল। তখন মহাসড়কে যানবাহন ও আশপাশের মার্কেটগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বেলা আনুমানিক ১১.০০ ঘটিকার সময়ে বাদীর ছেলের কর্মস্থলের মালিক তাঁর দোকান বন্ধ করে দেয়। এরপর বাদীর ছেলে বাসায় না গিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেয়।
এসময়ে আন্দোলন দমন করতে ১নং বিবাদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হুকুমে এবং ২নং বিবাদী সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পরিকল্পনায় ৩নং আসামী সাবেক এমপি শামীম ওসমানের নেতৃত্বে এবং ৪ থেকে ২০ নং আসামীগণ নারায়ণগঞ্জে গোপন বৈঠক করে নারায়ণগঞ্জের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনের নির্দেশ দেন। সে মোতাবেক বিভিন্ন থানার ও জেলার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা নারায়ণগঞ্জ জেলার চাষাঢ়া এলাকার আশেপাশের স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেত্রীত্বাধীন কয়েকটি বাড়ীতে আসামীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গোপন ষড়যন্ত্র করে এবং পরবর্তীতে একত্রিত হয়ে কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে ঘটনাস্থল আশেপাশের এলাকায় অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার উপর গুলিবর্ষণ ও হামলা চালায়।
বেলা আনুমানিক ১১.৩০ ঘটিকার সময় বিবাদীদের ছোড়া গুলিতে বাদীর ছেলে মোহাম্মদ সজিব গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়ে। এরপর তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে দুপুর ১.২০ মিনিটের সময় কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে আমার সন্তানের লাশ হাসপাতাল থেকে দোকান মালিক ও আমার ভাতিজার সহযোগিতায় গ্রামের বাড়ীতে এনে ২২ জুলাই ২০২৪ইং তারিখে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করি।
বাদী গ্রামের বাড়ীতে থাকায় ঘটনার পর সন্তান হারানোর শোক কাটিয়ে উঠে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি সংগ্রহ করে এবং ঘটনাস্থল এলাকায় গিয়ে প্রত্যক্ষদোষী স্বাক্ষীদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে থানায় মামলা করতে গেলে, থানা কর্তৃপক্ষ মামলা না নেওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে এসে মামলা দায়ের করতে বিলম্ব হয়।