নেপালে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে সেখানে আটকে পড়া বাংলাদেশি নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে একটি বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ। আটকে পড়া নাগরিকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় এবং ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তারা। কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন শোয়েব আব্দুল্লাহ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সোমবার ( ৮ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ১৯ জন নিহত এবং কয়েকশ মানুষ আহত হন। এর জেরে প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন এবং ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়।
এমন পরিস্থিতিতে সেখানে আটকা পড়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়সহ মোট ৩২ জন। পাশাপাশি প্রশিক্ষণে যাওয়া ডিএসসিএসসির সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর ৫০ জন কর্মকর্তা এবং ১০-১২ জন ক্রীড়া সাংবাদিকও ফিরতে পারেননি।
শোয়েব আব্দুল্লাহ বলেন, বিমানবন্দর বন্ধের সময়সীমা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তাই নিয়মিত ফ্লাইটে ফেরার সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশ থেকে একটি সামরিক বিমানের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। তবে সচিবালয় অচল, কর্মকর্তারা পলাতক হওয়ায় অনুমোদন প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়েছে। অনলাইনে অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বৃহস্পতিবার নাগরিকদের দেশে ফেরানো সম্ভব হবে।
দূতাবাস সূত্র জানায়, নেপালে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন ৫০-৬০ জন বাংলাদেশি। এছাড়া প্রতিদিনের ফ্লাইট চলাচলের হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে সেখানে এক হাজারের বেশি বাংলাদেশি পর্যটক রয়েছেন। তবে সবাই নিরাপদ আছেন বলে আশ্বস্ত করেছে দূতাবাস।
দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশিদের অযথা বাইরে বের না হতে এবং হোটেল বা নির্ধারিত স্থানে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে নেপালে ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে তা আপাতত বাতিল করার জন্যও আহ্বান জানানো হয়েছে।
জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস থেকে দুটি হটলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। নাম্বার দুটি হলো, +৯৭৭ ৯৮০৩৮৭২৭৫৯ এবং +৯৭৭ ৯৮৫১১২৮৩৮১।
দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশ ফোনকল এসেছে, যার বেশিরভাগই বিমান চলাচল বিষয়ে তথ্য জানতে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করে দূতাবাসের ফেসবুক পেজে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মঙ্গলবার থেকে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে আটকে থাকা ১০-১২ জন বাংলাদেশি পর্যটককে হোটেলে নেওয়া হয়েছে।
শোয়েব আব্দুল্লাহ আরও জানান, কাঠমান্ডুতে কারফিউ চলছে, যা বেলা ৩টা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পুরো শহর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। দূতাবাসের গাড়ি ব্যবহার করে বাংলাদেশিদের উদ্ধারের কাজ চলছে।