বাংলাদেশি এক কিশোরীকে পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই ভারতীয় নাগরিককে গ্ৰেফতার করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)। অভিযুক্তরা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বাসিন্দা। গ্ৰেফতার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন অমল কৃষ্ণ মন্ডল এবং আমির আলী শেখ।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) জানিয়েছে, বাংলাদেশি কিশোরীকে কাজের লোভ দেখিয়ে অবৈধভাবে ভারতে আনা হয়। এরপর তাকে জোর করে পতিতালয়ে বিক্রি করে দিয়ে খারাপ পথে নামতে বাধ্য করা হয়।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা লিখিতভাবে অভিযোগ জানানোর পর গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁর গাইঘাটা ও পেট্রাপোলে একসঙ্গে অভিযান চালায় এনআইএ। পেট্রাপোল থানার অন্তর্গত জয়ন্তীপুরের বাসিন্দা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে ব্যবসায়ী আমির আলী শেখের বাড়িতে আসে তদন্তকারী সংস্থা কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে গাইঘাটার সিকাতির বাসিন্দা অমলকৃষ্ণ মন্ডলের বাড়িতে অভিযান চালায় এনআইএ। তাদের বাড়ি থেকে দুই দেশের পাশাপাশি বেশ কিছু বৈদেশিক মুদ্রা উদ্ধার করা হয়। সেই সঙ্গে পাওয়া যায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি।
এরপরেই ওই দুই অভিযুক্তকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তারা পেট্রাপোল থানায় নিয়ে আসে। সেখানেই তাদের দুজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের কথাবার্তায় বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করা যায়। জিজ্ঞাসাবাদে মানব পাচারের বিষয়টি সামনে আসে। দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা জেরা করার পর এই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।
জানা গেছে, গত কয়েক মাস আগে পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্য উড়িষ্যার ভুবনেশ্বর থেকে ওই বাংলাদেশি কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, ওই কিশোরীকে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে বনগাঁয়ে পাচার করা হয়েছিল এবং তারপর কলকাতা হয়ে উড়িষ্যার কটক শহরে স্থানান্তর করা হয়।
এরপরেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে আসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কাছে। মামলা আদালতে ওঠে। আদালতে মামলা চলাকালীন বাংলাদেশে বসবাসকারী এক দম্পতি জড়িত থাকার বিষয়টিও জানতে পারে তদন্তকারী সংস্থা। পরে মানব পাচার চক্র দম্পতির সাথে অনলাইনে আর্থিক লেনদেনের জড়িত দুই ভারতীয়র বিষয়ে জানতে পারে ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি। এরপরে এই দুই ভারতীয়কে গ্ৰেফতার করা হয়।
গত রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুই অভিযুক্তকে স্থানীয় আদালতে তোলা হয়। আদালত অভিযুক্তদের ট্রানজিট রিমান্ডে উড়িষ্যায় নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়। যদিও সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) অভিযুক্ত আমির আলীর চাচা সাহেব আলী জানিয়েছেন, তার ভাতিজা মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করতো। এর বাইরে তিনি কিছু জানেন না।
অন্যদিকে আমলের স্ত্রী মিমি মন্ডল জানিয়েছেন, তার স্বামীকে বাড়ি থেকে পেট্রাপোল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি মাঠে চাষ করতো এবং জামা-কাপড়ের ব্যবসা করতো।
এনআইএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন নথিপত্র জব্দের মাধ্যমে বাংলাদেশি নারীদের ভারতে পাচারের নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ শুরু হয়েছে।