অনলাইনে আবেদন করে অল্প সময়ে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর কথা বলে ১২ জনের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন এক আওয়ামী লীগ নেতা। কিন্তু গত তিন বছরেও মুক্তিযোদ্ধা না হওয়ায় সেই টাকা এখন উদ্ধারে মরিয়া ওই ১২ জন। এমনকি ওই আওয়ামী লীগ নেতাকেও খোঁজ করে পাওয়া যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই আওয়ামী লীগ নেতা হচ্ছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নান্দাইল ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে মামুন খান ওরফে মামুনুর রশিদ খান।
তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। এর পরই ১২ জনকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর নাম করে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ প্রকাশ হয়।
ওই ১২ জন হলেন মো. আলাউদ্দিন আজাদ, ডা. আবুল কাশেম, সেলিম খান, শামছুল ইসলাম, আবু সাঈদ, বাদল চন্দ্র দাস, আবুল কাশেম, ওমর উদ্দিন, আব্দুল কাদির, হাফিজুর রহমান, আবু সাঈদ ও আব্দুল জলিল।
তার মধ্যে দুজন মারা গিয়েছেন।
থানায় দেওয়া একটি লিখিত অভিযোগ ও মুক্তিযোদ্ধা হতে আগ্রহী আলা উদ্দিন আজাদ জানান, তিনি ২০২২ সালের ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতা মামুন খানের কাছে পৌর সদরের একটি চায়ের দোকানে বসে ১২ জনের কাছ থেকে একসঙ্গে করা মোট এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দেন। কথা ছিল অনলাইনে আবেদন করে ইন্টারভিউ কার্ড ইস্যু করা হবে। এর মধ্যে কয়েক মাস পর মামুন খান ঢাকার একটি ১২ তলা ভবনের ৬ তলায় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের পরিচয়ে বেশ কয়েকজন লোককে এনে পরিচয় করান।
সেই সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করান। এরপর কিছু টাকা লেনদেন হয়। ওই সময় বলা হয় মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হলে প্রত্যেককেই আরো এক লাখ টাকা করে দিতে হবে। কিন্তু এর পর থেকে আর কোনো কাজ হয়নি। কিছুদিন পর জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা মামুন খান বলেছিলেন, তার এক আত্মীয় সচিব ও জাতীয় পার্টির চুন্নুর মাধ্যমে তিনি দ্রুতই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করাবেন।
পরে আর হয়ে ওঠেনি। ওই সময় তাগাদা দিলে নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হতো।
মুক্তিযোদ্ধা হতে টাকা দেওয়া আবু সাঈদ বলেন, ‘আমি দিনমজুরি করে আয়-রোজগার করি। এর মধ্যে ধারদেনা করে ১২ হাজার টাকা দিই আওয়ামী লীগ নেতা মামুন খানকে। কিন্তু এ্ বিষয়ে কিছু না করায় টাকা ফেরত চাইলে তিনি দিতে অস্বীকার করেন। থানায় যাওয়ার হুমকি দিলে কিছু টাকা ফেরত দেন।’
বাদল চন্দ্র দাস নামে আরেকজন জানান, তিনি পৌর সদরের একটি বাসস্ট্যান্ডে যাত্রীবাহী বাসের টিকিট বিক্রেতা। এই অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার জন্য মামুন খানকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই করতে পারেননি। এখন টাকা পেতে তাকে খোঁজ করলেও পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতার মোবাইল নম্বরে ফোন করলে তিনি প্রথমে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করলেও পরে বলেন, ‘আমি তো অনলাইনে আবেদন করার জন্য মাত্র ৭০ হাজার টাকা নিয়েছি। তবে ওই টাকা তাদের সামনেই খরচ করা হয়েছে। তা ছাড়া তাদের তো ঢাকায় নিয়ে ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণ করানো হয়েছে।’ তাহলে মুক্তিযোদ্ধা হবে কবে, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আপনার সাথে দেখা করব’—এই বলে লাইনটি কেটে দেন।
জানতে চাইলে নান্দাইল উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মাজহারুল হক ফকির বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নেতা মামুনকে কেন টাকা দিলেন। তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা বানাতে পারবেন?’
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.