আফগানিস্তানের সব বইয়ের দোকান, স্কুল লাইব্রেরি, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রাখা সব ‘বিকৃত’ বই শনাক্ত করে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাইয়্যিদ আবুল আ’লা মওদুদী সহ বহু ইসলামি চিন্তাবিদের বই আছে এর মধ্যে। এ নির্দেশ দিয়েছেন তালেবান সুপ্রিম নেতা মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা।
নির্দেশ জারি করে তিনি কর্তৃপক্ষকে এ হুকুম দেন। বৃটেনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে এ খবর লিখেছেন সাংবাদিক মুখতার ওয়াফায়ী।
তিনি বলেছেন, নিষিদ্ধ এসব বইয়ের তালিকায় আছে দান্তের ১৪শ’ শতকের রচনা ‘দ্য ডিভাইন কমেডি’, যোসেফ স্মিথের ‘দ্য বুক অব মরমন’, খলিল জিবরানের ‘দ্য প্রফেট’, এবং ইউভাল নোয়া হারারির আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত ‘স্যাপিয়েন্স’।
এছাড়াও বহু খ্যাতনামা ইসলামি আলেম, ধর্মতাত্ত্বিক, ইরানি বুদ্ধিজীবী ও আফগান লেখকের বইও কালো তালিকাভুক্ত হয়েছে।
হেরাত ও কাবুলের প্রকাশক এবং স্কুল লাইব্রেরিয়ানরা ইন্ডিপেনডেন্ট পারসিয়ান’কে নিশ্চিত করেছেন- নারীর অধিকার, জাতিসংঘের প্রস্তাবনা, তালেবানবিরোধী লেখক জীবনী, ধর্মনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা কিংবা সাবেক আফগান প্রজাতন্ত্রের উপর লেখা বইগুলো ‘বিকৃত’ হিসেবে চিহ্নিত করে এখন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এ জন্য গত ১৩ই জুলাই রবিবার চারটি তালেবান মন্ত্রণালয়- ধর্ম মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক বৈঠকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন পুনঃনিশ্চিত করে। বৈঠকে জানানো হয়, তালেবান নেতা আখুন্দজাদার নির্দেশে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা সারাদেশের বই পর্যালোচনা করবে এবং যেসব বইয়ে ‘সন্দেহজনক বিষয়বস্তু’ পাওয়া যাবে, সেগুলো আলেমদের হাতে তুলে দেবে পরবর্তী পর্যালোচনার জন্য।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রী নূর মোহাম্মদ সাকিব বলেন, বিশেষ এক ফরমান অনুযায়ী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লেখা এমন সব বই, যেগুলোর উদ্দেশ্য হলো সমাজকে ‘ভ্রান্ত ও বিপথগামী করা’, সেগুলো সংগ্রহ করে সরিয়ে ফেলা হবে। একইসঙ্গে আলেমদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করা হচ্ছে, যাতে তারা শরিয়া নীতির আলোকে জনগণকে এসব বই সম্পর্কে সতর্ক করতে পারেন। সাকিব দাবি করেন, আফগানিস্তান শুধু সামরিক আগ্রাসনের শিকার হয়নি, বরং ‘সাংস্কৃতিক আগ্রাসন’-এরও শিকার। বিদেশি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামি ও আফগান ঐতিহ্য ধ্বংসের চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি।
নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা ও কারণ: গত শীতে তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের কাছে পাঠায় নিষিদ্ধ বইয়ের তালিকা। এসব বইকে তারা চিহ্নিত করেছে জাতীয় স্বার্থবিরোধী, ইসলামবিরোধী, ইসলামি আমিরাতবিরোধী, মিথ্যা বিশ্বাস প্রচারক, বা নারী ও মানবাধিকারের পক্ষে লেখা হিসেবে। হেরাতের এক সাক্ষরতা কর্মী তিনটি পৃথক তালিকা শেয়ার করেছেন। তাতে ৬২০টি নিষিদ্ধ বইয়ের নাম আছে। এসব বইয়ের পাশে মন্তব্য হিসেবে লেখা হয়েছে- ‘শিয়াবাদ, দেশদ্রোহীর প্রশংসা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, পাশ্চাত্য স্বাধীনতা, নারী অধিকার, কমিউনিজম, ইরান প্রশংসা, কুসংস্কার, তালেবানবিরোধিতা, জাতিসংঘের আইন, প্রজাতন্ত্রের বর্ণনা, সংগীতের প্রশংসা, অগ্রহণযোগ্য বিষয়বস্তু’ ইত্যাদি।
নিষিদ্ধ লেখকরা: অদ্ভুতভাবে তালিকায় শুধু পাশ্চাত্য লেখক নন, বহু প্রভাবশালী ইসলামি চিন্তাবিদও আছেন। যেমন- মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব-এর লেখা ‘কিতাব আত-তাওহিদ’। সাইয়্যিদ আবুল আ’লা মওদুদীর লেখা ‘কুরআনের চার সংস্কার’। সাইয়্যিদ কুতুব-এর লেখা ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’। জামাল উদ্দিনের লেখা আফগান রচনা। আবদুল্লাহ আজ্জামের বই। ইরানি বুদ্ধিজীবী আলী শারিয়াতি, মোর্তেজা মোটাহারি, রামিন জাহানবেগলু’র লেখা বই। ইউসুফ আল-কারাদাওয়ির ‘দ্য লফুল অ্যান্ড দ্য প্রোহিবিটেড ইন ইসলাম’ও আছে এ তালিকায়। এসব বইকে ‘ভ্রান্ত বিশ্বাস, শিয়া মতবাদ বা কুফরি’ হিসেবে লেবেল দেয়া হয়েছে।
প্রকাশনা শিল্পে প্রভাব: একজন কাবুলভিত্তিক প্রকাশক জানিয়েছেন, তালেবান ফের ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানের একসময়ের ক্রমবর্ধমান প্রকাশনা শিল্প ধ্বংস হয়ে গেছে। এমনকি ইরান থেকে বই আমদানিও এখন সীমিত। সীমান্তে তালেবান এজেন্টরা বই পরীক্ষা করে, জীবন্ত প্রাণীর ছবি কেটে দেয় এবং অনেক বই প্রবেশে বাধা দেয়। তিনি অভিযোগ করেন, তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যে প্রকাশনা কমিটি গঠন করেছে, তাতে আছেন বেশির ভাগই অশিক্ষিত আলেম, যারা নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী বই বিচার করে।
অনিশ্চয়তা ও ভয়: বর্তমানে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নেই। যেকোনো তালেবান সদস্য- বিশেষত প্রচার ও সদাচার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা- চাইলেই বই নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন। এতে প্রকাশনা ও পাঠ সংস্কৃতি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.