মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তের পুরো অংশ এখন নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে আরাকান আর্মি। আগে তারা বাংলাদেশ থেকে খাবার, ওষুধ ও পোশাক পাচার করে নিতো। বিনিময়ে বাংলাদেশে ইয়াবা ও অন্যান্য মাদক ঢুকাতো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিজিবির কঠোর নজরদারির কারণে এসব কর্মকাণ্ডে বেগ পেতে হচ্ছে সশস্ত্র সংগঠনটিকে।
ফলে এখন তারা সীমান্তে নতুন কৌশল নিয়েছে—নাফ নদী থেকে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করছে। স্থানীয়রা বলছেন, আরাকান আর্মির এই কর্মকাণ্ডে সীমান্তের জেলে ও নৌযান মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে।
খাদ্য ও অর্থের জন্য মরিয়া আরাকান আর্মি, ধরে নিচ্ছে জেলেদের
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাত ও খাদ্য-ওষুধ সংকটের কারণে আরাকান আর্মি মরিয়া হয়ে উঠেছে। আগে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সরবরাহে তারা নির্ভরশীল ছিল। এখন তা বন্ধ হওয়ায় তারা অর্থ ও অস্ত্রের জন্য জেলেদের অপহরণে ঝুঁকছে।
বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক মনে করেন, আরাকান আর্মি অর্থ সংকটে পড়েছে। তাই তারা পাচার ও মুক্তিপণের মাধ্যমে টিকে থাকতে চাইছে। বাংলাদেশকে এ বিষয়ে আরও কঠোর অবস্থান নিতে হবে।
স্থানীয় পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, নাফ নদী এবং স্থল সীমান্তের পুরো এলাকাতেই রয়েছে আরাকান আর্মির সদস্যদের অবস্থান। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পরবর্তী অভিযানের জন্য অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহের জন্য মরিয়া সশস্ত্র সংগঠনটি। সীমান্তে বাংলাদেশ কড়াকড়ি বাড়ানোয় আরাকান আর্মি কিছুটা বেকায়দায় পড়েছে। তাই তারা নানা তৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর চাপ তৈরি করতে চাইছে। আরকান আর্মির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, চালের সংকট না হলেও অন্যান্য খাদ্য, পোশাক এবং ওষুধ সংকটে আছে তারা।
কেবল আগস্ট মাসেই নাফ নদী থেকে অন্তত ১০টি মাছ ধরার ট্রলারসহ ৬৩ জন জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। এর আগে ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত তারা ২৬৭ জন বাংলাদেশি জেলেকে অপহরণ করেছে। যদিও এদের মধ্যে ১৮৯ জনকে এবং ২৭টি নৌযান ফেরত আনা গেছে।
উখিয়ার পালংখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মাঝেমধ্যেই সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ শুনি। কখনো কখনো তা আমাদের সীমান্তের কাছাকাছি চলে আসে। তারা আমাদের সীমান্তের ভিতরেও ঢুকে পড়ে। তার কথায়, এখানে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনাও আছে। আগে বাংলাদেশে মিয়ানমারের জান্তা ইয়াবা পাচার করত। এখন এর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি।
সতর্ক বিজিবি-কোস্টগার্ড
কক্সবাজার বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন রাখাইন নিয়ন্ত্রণ করছে আরাকান আর্মি। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কোনো বিষয় হলে তাদের সঙ্গে কথা বলছি। কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে মাদক চোরাচালান এখন বড় চ্যালঞ্জে হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা চালাতে দেয়া হবে না। সীমান্তে সব ধরনের অপতৎরতা কঠোর হাতে দমন করা হবে। কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহায়তা দেওয়া হবে না।
কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের গণমাধ্যম কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক জানিয়েছেন, রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের কারণে সীমান্তের বড় অংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। এর ফলে শূন্যরেখা অতিক্রম করে মিয়ানমারে ঢুকলেই জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ অবস্থায় জেলেদের ফেরত আনতে গিয়ে কোস্টগার্ডসহ সীমান্তে নিয়োজিত বাহিনীকে নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। এতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, মাদক ও অস্ত্রপাচার রোধেও চ্যালেঞ্জ বাড়ছে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.