গাজীপুরের গাছা এলাকার গাসিক ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাজনীতিতে এক সময়ের পরিচিত মুখ আলামিন। রাজনৈতিক পরিচয় বদলে, দলীয় ছত্রছায়া থেকে ব্যক্তিগত স্বার্থে বিভিন্ন অভিযোগে জড়ানো এই যুবক। হয়েছেন সমন্বয়ক, আবার এখন এনসিপির যুব সংগঠনের সক্রিয় সদস্য।
তথ্য সূত্র মতে, ৫ আগস্টের আগে আলামিন ছিলেন গাছা এলাকার যুবলীগ নেতা জুয়েল মন্ডলসহ স্থানীয় আওয়ামীপন্থী নেতৃবৃন্দের ঘনিষ্ঠ। জুয়েল মন্ডলের নেতৃত্বে যুবলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পাশাপাশি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে প্রতিহত করতে আওয়ামীপন্থী বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে গাজীপুরসহ ঢাকার রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। গত ৫ আগস্টের ঘটনার পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে গেলে, ক্ষমতাচ্যুত সরকারের বিরুদ্ধে সংঘটিত ছাত্র হত্যা মামলার অন্যতম আসামি হন আলামিন। গাজীপুরের কোনাবাড়ী থানায় ছাত্র হত্যা মামলায় ৩৮ নম্বর আসামি আলামিন।
মামলার গ্রেফতার এড়াতে স্থানীয় একাধিক ‘সমন্বয়ক’ নামধারী প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে তিনি নিজেই হয়ে যান সমন্বয়ক। অভিযোগ উঠেছে, নিজেকে ‘সমন্বয়ক’ পরিচয় দিয়ে স্থানীয়দের ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ আদায় শুরু করেন তিনি। কেউ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে, তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হতো। ইতোমধ্যে একাধিক ব্যক্তি ভুক্তভোগী হয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গাছা এলাকার জুম্মন নামের এক ব্যক্তি জানান, আলামিন আমার পূর্ব পরিচিত। তার একটি পারিবারিক ঝামেলার বিচারে আমাকে ডেকে নিয়েছিল। তথ্য, প্রমাণের ভিত্তিতে আমি ন্যায় কথা বলেছি। আলামিন প্রাথমিকভাবে বিচার মেনে নেয় কিন্তু ৫ আগস্টের পর ছাত্র হত্যা চেষ্টা মামলায় আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গাছা থানার পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয়।
গাছা এলাকার আরেক ভুক্তভোগী কামরুল হাসান প্রধান বলেন, আমার ছেলে একজন চাকরিজীবী। আলামিনের সাথে আমাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল। তাই সে আমাকে ও আমার ছেলেকে হয়রানি করার জন্য ছাত্র হত্যাচেষ্টা মামলাসহ একাধিক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। আলামিনের কাছে আমি প্রতিকার চাইতে গেলে আমার কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় হয়রানি করে যাচ্ছে।
গাছা এলাকার এক ব্যবসায়ী কামাল জানান, আমি একজন ব্যবসায়ী। ছাত্র হত্যাচেষ্টার এক মামলায় আমাকে ফাঁসিয়ে দেয় আলামিন। পরবর্তীতে মামলা থেকে নাম সরিয়ে দেওয়ার কথা বলে ৩-৪ লাখ টাকা দাবি করে। তাছাড়া কিছু টাকাও নেয়। পরবর্তীতে আমি মামলার বাদীর সাথে কথা বলে নিজেই সমাধান করে নেই। কিন্তু এখনো বিভিন্ন সময় লোক মারফত বিভিন্ন কিছু দাবি করে। আমি দিতে অস্বীকৃতি জানালে পুলিশ ও বিভিন্ন লোক দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে।
জিল্লু নামের এক প্রবাসী মুঠোফোনে জানান, আমি ২০২৩ সালে চাকরির সুবাদে মালয়েশিয়া চলে এসেছি। আমি আলামিনের বিরুদ্ধে একটি মামলার স্বাক্ষী। ৫ আগস্টের পরে সে প্রায় সময় আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি ধামকি দিত এবং টাকা চাইতো। তারপরে একদিন জানতে পারলাম যে আমার নামে ও আমার বাবার নামে ছাত্র হত্যা চেষ্টার মামলা হয়েছে। আমার বাবা একজন কৃষক এবং আমি প্রবাসী। আমাদের বিরুদ্ধে এমন ন্যাক্কারজনক কাজের বিচার দাবি করছি।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে গাছা থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ আলী মোহাম্মদ রাশেদের সাথে সখ্যতা তৈরি করে আলামিন বিভিন্ন অপকর্ম চালাতো। এছাড়াও থানার বিভিন্ন উপ-পরিদর্শকের সাথে সখ্যতা থাকার কারণে সকলকে হয়রানি করতো আলামিন।
বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে গাছা থানার সাবেক ওসি আলী মোহাম্মদ রাশেদ বদলি হলে আলামিনের সাময়িক ক্ষমতা হ্রাস পায়। নিজেকে আইনের হাত থেকে রক্ষা করতে বর্তমানে তিনি এনসিপির যুবশক্তি সংগঠনের সক্রিয় সদস্য।
এনসিপির যুবশক্তি নেতা পরিচয়ে বর্তমানে তিনি তার ত্রাসের রাজত্ব বহাল রেখেছেন। গাছা এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব গড়ে তোলার অভিযোগে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন ভুক্তভোগীরা। হত্যা মামলা ও স্থানীয় লোকদের হয়রানির একাধিক অভিযোগ থাকার পরেও এখন পর্যন্ত আলামিনের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বহুরূপী আলামিনের রাজনৈতিক রূপান্তর ও তার নামে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি ভুক্তভোগীদের।
আলামিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অতীতে অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল করতো কিন্তু পরবর্তীতে ছাত্র আন্দোলনে একাধিক ছাত্র আহত হওয়ায় হাসনাত আব্দুল্লাহ ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করে গাছা এলাকায় আমরা সমন্বিতভাবে এনসিপির যুবশক্তি দলকে প্রতিষ্ঠিত করি। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে কোনাবাড়ি থানায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মিথ্যা ছাত্র হত্যা মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা নিজেরাও বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত।
জাতীয় যুবশক্তি (এনসিপি)’র কেন্দ্রীয় সংগঠক মো. মহসিন উদ্দিন বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের এনসিপির রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই। কাউকে অবগত না করে যদি আমাদের মিছিল-মিটিংয়ে কেউ অংশগ্রহণ করে, তা আমাদের জানার কথা নয়। তবে আমরা যাচাই করে দেখবো, যদি কেউ এনসিপির নাম ব্যবহার করে নিজের স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করে, তবে আমরা অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, আলামিনের বিরুদ্ধে কোনাবাড়ি থানার মামলা সম্পর্কে আমি অবগত আছি। এই মামলার বিষয়ে একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে মামলা বাণিজ্য বা কাউকে হয়রানি করলে ভুক্তভোগীরা লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.