ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ১১টি সুনির্দিষ্ট অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল।
সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এসব অভিযোগ তুলে ধরে।
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল মনোনীত ভিপি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামীম, এজিএস পদপ্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদসহ ঢাবি ছাত্রদলের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় আবিদুল ইসলাম খান বলেন, প্রচারণা চলাকালেই শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম যে জয়-পরাজয় যাই হোক না কেন, আমরা তাদেরকে ছেড়ে যাবো না। শিক্ষার্থীদেরকে দেওয়া সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষার্থেই আজ এখানে সমবেত হয়েছি।
তিনি বলেন, সদ্য অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে সংঘটিত নানা অনিয়ম ও অসঙ্গতি আমাদের সকলের চোখে ধরা পড়েছে। যা অত্যন্ত দৃষ্টিকটু এবং শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের উৎসবকে নেতিবাচকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি নির্বাচনকালীন অনিয়ম ও অসঙ্গতির বিষয়ে ১১টি অভিযোগ উত্থাপিত করেন।সেগুলো হলো-
১. ভোটার উপস্থিতির আগেই ভোটার তালিকায় স্বাক্ষর দেওয়া এবং নির্দিষ্ট প্যানেলের পক্ষে ভোট দেয়া ব্যালট পেপার সরবরাহসহ নানা জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ভোটার তালিকা ও সিসিটিভি ফুটেজ চেয়ে আবেদন করলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি।
২. ব্যালট পেপারে ক্রমিক নম্বর না থাকায় কারচুপির সুযোগ তৈরি হয়। এছাড়া ছাপানো, বিতরণকৃত, ব্যবহৃত ও ফেরতকৃত ব্যালট পেপারের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। প্রার্থীরা বারবার এ বিষয়ে তথ্য চাইলেও প্রশাসন কালক্ষেপণ করেছে।
৩. নির্বাচনী ব্যালট কোন প্রেসে ছাপানো হয়েছে, তা গোপন রাখা হয়। পরে নীলক্ষেতের এক ছাপাখানায় বিপুল সংখ্যক ব্যালট পেপার অরক্ষিত অবস্থায় পাওয়া যায়।
৪. ভোট গণনা মেশিন ও সফটওয়্যার যাচাই প্রক্রিয়া গোপনে সম্পন্ন করা হয়। এতে প্রার্থী ও ভোটারদের কাউকে অবহিত করা হয়নি। ফলে ভোট গণনার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
৫. প্রতিটি কেন্দ্রে একজন করে পোলিং এজেন্ট নেওয়ার কথা থাকলেও ভোটের আগের রাতেই তালিকা প্রকাশ করে অনেক প্রার্থীর প্রস্তাবিত এজেন্টকে বাদ দেয়া হয়। এজেন্ট বাছাইয়ের প্রক্রিয়াও গোপন রাখা হয়।
৬. যথাসময়ে এজেন্টদের আইডি কার্ড সরবরাহ করা হয়নি। ফলে অনেক এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেননি। এ কারণে একাধিক কেন্দ্রে পক্ষপাতদুষ্ট পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে।
৭. প্রার্থীদের জানানো হয়েছিল ৮টি কেন্দ্রে ভোট হবে, কিন্তু নির্বাচনের দিন দেখা যায় ১৮টি কেন্দ্রে ভোট হচ্ছে। এতে নির্দিষ্ট একটি প্যানেল ছাড়া বাকিরা পর্যাপ্ত এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারেননি।
৮. পোলিং অফিসার নিয়োগের ক্ষেত্রেও অস্পষ্টতা ছিল। চিফ রিটার্নিং অফিসারের পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরাসরি নিয়োগ দেয়। অনেক পোলিং অফিসার আচরণবিধি সম্পর্কে ধারণাহীন থেকে সাংবাদিকদের কাছে ভ্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেন।
৯. নিরাপত্তা দায়িত্বে থাকা বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও গার্লস গাইড সদস্যদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অভিযোগ রয়েছে, তাদের সহায়তায় বহিরাগতদের প্রবেশের সুযোগ দেয়া হয়েছে। কয়েকজন বহিরাগতকে শিক্ষার্থীরা আটক করে প্রক্টর অফিসে সোপর্দও করে।
১০. ভোট গণনার সময় পোলিং এজেন্টদের কার্যত নিষ্ক্রিয় রাখা হয়। অনেক এজেন্টকে গণনা প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। ফলে অধিকাংশ এজেন্ট রেজাল্ট শিটে স্বাক্ষর না করেই কেন্দ্র ত্যাগ করেন।
১১. অস্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহারের পাশাপাশি দুপুরের পর অনেক বুথে মার্কার পেন ফুরিয়ে যাওয়ায় ভোটারদের বলপেন ব্যবহার করতে বাধ্য করা হয়। বলপেনে দেওয়া ভোট ওএমআর মেশিনে গণনা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। আঙ্গুলে দেওয়া কালি অস্থায়ী হওয়ায় একাধিক ভোটদানের সুযোগ থেকেছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, এসব অভিযোগ বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পথে ফিরে আসবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এসব অনিয়মের সত্য উন্মোচন করবে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.