ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ১০৪ কিলোমিটার অংশে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ । গত কয়েক মাসে বারবার ঝটিকা মিছিল করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। এসব ঝটিকা মিছিল করতে তাদের আর্থিক সহযোগিতা করেন আওয়ামী লীগের কিছু পলাতক নেতা। জনপ্রতি দুই হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মিছিল করায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার এমপিদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে গেলেও দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তারা দেশে থাকা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতাকর্মীকে দিয়ে দেশ অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যার ঘটনায় কুমিল্লায় ৪২টি মামলা হলেও আসামি ধরা পড়েছে হাতেগোনা কয়েকজন। মামলা দিয়ে অনেকেই বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন নেতা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত অরাজকতার কেন্দ্রবিন্দু বানাতে মরিয়া নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সভাপতি মিনহাদুল হাসান রাফি গ্রেপ্তার হলেও সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল পিয়াস এখনো অধরা। জনপ্রতি দুই হাজার টাকা দিয়ে মিছিল করাচ্ছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। মিছিলে অংশ নেওয়া বেশিরভাগই টোকাই শ্রেণির।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ নেতা ইসরাফিল পিয়াসের নেতৃত্বে ঝটিকা মিছিল হয়েছিল। পুলিশ দুয়েকজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হলেও বাকিরা এখনো অধরা। গ্রেপ্তার করা যায়নি মিছিলের নেতৃত্বে দেওয়া ইসরাফিল পিয়াসকে।
ঝটিকা মিছিলের বিষয়ে অনুসন্ধানে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। কুমিল্লায় ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সংগঠিত করছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও বর্তমান কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এহেতাসামুল হাসান রুমী । রুমীকে সব ধরনের সহযোগিতা করছেন কুমিল্লা-১১ আসনের সাবেক এমপি ও রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক এবং কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সাবেক এমপি বাহাউদ্দিন বাহার।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বুড়িচংয়ের আবেদপুর গ্রামটি এখনো আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। মূলত এই গ্রাম থেকেই হয় নাশকতার সব পরিকল্পনা। বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী, এমনকি পুলিশও এই গ্রামে ঢুকতে পারে না। এমন তথ্য জানিয়েছেন বুড়িচং থানার ওসি মো. আজিজুল হক। তিনি বলেন, রুমীর মাধ্যমে মহাসড়কঘেঁষা আবিদপুর গ্রামে রাজত্ব কায়েম করেছে শহীদ মিয়ার ছেলে মুজিবুর রহমান এবং আব্দুল খালেকের ছেলে আবু আহমেদ। তাদের কাছে অনেক অবৈধ অস্ত্র থাকায় ভয়ে কেউ কথা বলে না।
সূত্র জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর পলাতক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করা হয় কুমিল্লায়। আবিদপুর গ্রামের যুবলীগ ক্যাডার মজিবুর রহমানের বাড়িতেই জন্মদিন পালন করা হয়। অভিযান চালিয়ে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও এখনো অধরা যুবলীগ ক্যাডার মজিবুর রহমান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। মূলত আগামী নির্বাচনে ভোটারদের কাছে টানতেই আওয়ামী প্রেম বাড়াচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। এই আওয়ামী প্রেম কুমিল্লায় অরাজকতা সৃষ্টির অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে বিবির বাজার স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন ভারতীয় নাগরিক আব্দুল জলিল। সে সময় তিনি বলেন, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সোনামুড়া এলাকায় আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা অবস্থান করছেন। পাসপোর্ট না থাকায় তারা বাংলাদেশে ঢুকতে পারছেন না। অবৈধভাবে ঢুকতে ভারতের দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী জুবায়ের আলম জিলানী বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যাডাররা কুমিল্লায় অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। আমরা তাদের ছাড় দেব না। অর্থের বিনিময়ে ভাড়া করে লোকজন দিয়ে মহাসড়কে মিছিল করছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ। প্রশাসন তাদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না, এটা তাদের ব্যর্থতা। যাদের গ্রেপ্তার করা হয়, তারাও দ্রুত জামিনে বের হয়ে যায়। দ্রুত জামিনের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দালালি করছেন কেউ কেউ। তাদের চিহ্নিত করতে না পারলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল দমন করা কষ্টকর হবে।
বুড়িচংয়ের মোকাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা রুমীর ছত্রছায়ায় এগুলো করছে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। রুমী ও মুজিবুর অস্ত্রধারী ক্যাডার। তাদের ইন্ধনেই মহাসড়কে মিছিল করছে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ।
বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, মহাসড়কে মাঝেমধ্যে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ঝটিকা মিছিল করছে। প্রশাসনের উচিত তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা।
ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কের সহকারী অধ্যাপক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ড. মোহাম্মদ ইমরান আনসারী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ার পর সীমান্ত এলাকাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশ। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আত্মীয়স্বজন থাকায় সেখানেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আছেন। সেখানে সংগঠিত হয়ে তারা দেশে আসার পাঁয়তারা করছে। এজন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারকে বিশেষ তৎপর থাকতে হবে। পাশাপাশি বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ ফ্যাসিবাদবিরোধী দলগুলোকে সীমান্তে বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. নাজির আহমেদ খান বলেন, সীমান্ত এলাকাসহ যেকোনো জায়গায় অরাজকতা করার চেষ্টা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। কেউ যদি গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাসড়কে মিছিল এবং শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করা কয়েকজন নেতাকর্মীকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.