বসুন্ধরা গ্রুপ থেকে সহায়তা নেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান সমন্বয়ক মো. নুর নবী। প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রিপাড়ায় বসে সংগঠন চালানো, আর্থিক অসংগতি ও জুলাই ঐক্যে বিভক্তি সৃষ্টি নিয়েও। আজ শনিবার (২ আগস্ট) রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি মো. নুর নবী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান সমন্বয়ক। জুলাই অভ্যুত্থানে চলাকালে ১৯ জুলাই ডিবি কর্তৃক গুম ও স্বাধীনতার পর ৬ আগস্ট মুক্ত বাতাসে ফিরে আসি। এতদিন দায়িত্ব পালন করছিলাম বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা, কোরাম কেন্দ্রিক সংগঠন পরিচালনা এবং সাম্প্রতিক সময়ের কিছু গভীর ও নীতিহীন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ এবং জুলাই অভ্যুত্থানের আদর্শিক অবস্থানকে অক্ষুণ্ন রাখতে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দিচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে মো. নুর নবী বলেন, ‘আমার এই পদত্যাগের পেছনে যেসব কারণ রয়েছে, তা নিম্নরূপভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করছি-যেসব ছাত্রযোদ্ধা আন্দোলনের চূড়ান্ত মুহূর্তে পুলিশি দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা সহ্য করে মাঠে ছিলেন, তাদের কোনো স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না, শুধুমাত্র মতের অমিল থাকার কারণে। অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা এবং সেই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সংগঠন বলা হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোনো মূল্যয়ন এখানে করা হয়নি।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ব মন্ত্রিপাড়াকে তাদের সংংগঠনের মূল অফিস বানিয়ে রেখেছে। তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জুলাই চেতনাকে বিক্রি করে দিয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় অনুষ্ঠান আয়োজিত হওয়া এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা নেওয়ার মাধ্যমে সংগঠনের বিশ্বাসযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়েছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ-এর নাম করে তাদের পূর্বের সংগঠন ছাত্রশক্তি ‘কোরাম’ তৈরি করে সকল মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও প্রতিনিধিত্বের ভার নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রেখেছে। এতে সাধারণ সদস্য ও কর্মীদের মতামত বা অংশগ্রহণ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। এই কোরামভিত্তিক ছাত্র রাজনীতি প্রকৃতপক্ষে স্বৈরাচারী প্রবণতার পরিচায়ক এবং গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থি। জুলাইকে রীতিমতো তাদের ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করেছে। অথচ জুলাই আন্দোলন ছাত্রদের একটি গণ-আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠেছিল।
এখানে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, সাধারন শিক্ষার্থী এবং সকল রাজনৈতিক সংগঠনের অংশগ্রহণ দিনের আলোর মত স্পষ্ট। কিন্তু এই সংগঠনের মূল নেতৃত্বে যারা অবস্থান করছে তাদের আচার আচরণে জুলাই বিপ্লবের সেই জাতীয় ঐক্য বার বার ধসে পড়ছে। তাদের জন্যই ছাত্র সংগঠনগুলো নিজেদের মধ্যে ক্রেডিট-ক্রেডিট খেলার অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এই অভ্যুত্থানকে শুধু দলেরই নয় বরং কিছু নির্দিষ্ট নেতারাও তাদের ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করেছে। পুরো আয়োজন এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন এটি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর একক অর্জন, এবং বাকিদের অবদান খুবই সামান্য। আমি মনে করি তাদের মাধ্যমেই জুলাই গণ অভ্যুত্থানের ইতিহাস চরমভাবে বিকৃতি ঘটছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপরোক্ত অভিযোগসমূহের প্রেক্ষিতে আমি গভীর দুঃখ ও বেদনাবোধের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, আমি আর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদদের বর্তমান কর্মকৌশল আদর্শের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছি না। আমি জুলাই আন্দোলনে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সদস্যদের অবদানে বিশ্বাসী ছিলাম এবং থাকব, কিন্তু বাগছাস -এর বর্তমান বিপথগামী নেতৃত্বের অংশ হয়ে থাকতে পারি না। অতএব, আমি আনুষ্ঠানিকভাবে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ থেকে পদত্যাগ করছি এবং একইসঙ্গে একটি আদর্শিক ও গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের স্বপ্ন নিয়ে নতুন পথচলা শুরু করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.