কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর তীরে উচ্ছেদ অভিযান তৃতীয় দিনে বন্ধ থাকলেও, বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনে সকাল থেকে পুনরায় শুরু হয় উচ্ছেদ কার্যক্রম। সকাল থেকেই কস্তুরাঘাটের পশ্চিমে বদর মোকাম অংশে উচ্ছেদের কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় জড়ো হতে থাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। চারপাশে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড নির্মাণ করা হয় এবং নিয়ন্ত্রণ করা হয় চলাচল। এরপর নদীর বদর মোকাম অংশে শুরু হয় উচ্ছেদ কার্যক্রম। ৩টি এক্সভেটর দিয়ে গুড়িয়ে দেয়া হয় অবৈধ স্থাপনা।
উচ্ছেদ কার্যক্রমের পাশাপাশি সেখানে বসবাসকারিরা বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছে। পেশকারপাড়া অংশে সকাল থেকে চলছে বিক্ষোভ। সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং বাঁশ দিয়ে দেয়া হয়েছে ব্যারিকেড। স্কুল শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শত শত নারী-পুরুষ সড়কে বসে বিক্ষোভ করছেন। তাদের দাবি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বসতি ছাড়বে না তারা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)- এর পরিচালক এ কে এম আরিফ উদ্দিন জানান, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তৃতীয় দিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনে এসে উচ্ছেদ কার্যক্রম আবারও শুরু হয়েছে। নদীর সকল দখল উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত কার্যক্রম চলবে।
৪০০ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা
এদিকে, উচ্ছেদের তৃতীয় দিন প্রতিবন্ধকতায় কার্যক্রম পণ্ড হলেও এ ঘটনায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র কক্সবাজার নৌ বন্দরের পোর্ট কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াকিল বাদি হয়ে বুধবার রাতেই কক্সবাজার সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন বলে জানিয়েছেন, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইলিয়াস খান।
তিনি জানান, সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান ধারায় মামলাটি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশ চেষ্টা করছে।
এর আগে, মঙ্গলবার কস্তুরাঘাটস্থ বাঁকখালী নদীর তীরে অবৈধভাবে দখল করে তৈরি স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশের পর হামলার ঘটনায় এজাহারনামীয় ১০ জন সহ ২৬০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানিয়েছে, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৮১ কিলোমিটারের বাঁকখালী নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট-নুনিয়াছটা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। নুনিয়ারছড়া থেকে মাঝিরঘাট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে সবচেয়ে বেশি দখলের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ থেকে ১২ বছরে এই ছয় কিলোমিটারে ১ হাজারের বেশি অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় ভূমি অফিস এবং বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের পৃথক তালিকা তৈরি করেছে। সহস্রাধিক অবৈধ দখলদার থাকলেও দুই তালিকায় স্থান পেয়েছে প্রায় সাড়ে ৩০০ জন প্রভাবশালী।
বিআইডব্লিউটিএ-এর সূত্র মতে, ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার বিআইডব্লিউটিএ-কে বাঁকখালী নদীবন্দরের সংরক্ষক নিযুক্ত করে। প্রজ্ঞাপনে নদী তীরের ৭২১ একর জমি বিআইডব্লিউটিএ-কে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা ছিল। জমি বুঝিয়ে দিতে বারবার জেলা প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা তা দেয়নি। ফলে নদীবন্দর প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় দখল অব্যাহত ছিল।
যার সূত্র ধরে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ যৌথ অভিযান চালিয়ে ৬ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু পরে তা আবারও দখল হয়ে যায়। উচ্ছেদ করা প্যারাভূমিতে ফের নির্মিত হয়েছে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা।
এর মধ্যে বাঁকখালী নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে গত ২৪ আগস্ট সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
মামলার রায়ে বলা হয়, কক্সবাজারে বাঁকখালী নদীর বর্তমান প্রবাহ এবং আরএস জরিপের মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণপূর্বক নদীটিকে সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া নদীর সীমানায় থাকা সব দখলদারের তালিকা তৈরি করে আগামী চার মাসের মধ্যে উচ্ছেদ এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
যার সূত্র ধরে শনিবার কক্সবাজার সফরে আসেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি কক্সবাজার হিলটপ সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক বাঁকখালী নদী দুষণ ও দখলমুক্তকরণের লক্ষ্যে বিশেষ সমন্বয় সভা'য় প্রধান অতিথি ছিলেন। সভা শেষে তিনি কথা বলেন সাংবাদিকদের সাথে।
এসময় তিনি কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর দখলদারদের সমন্বিত তালিকা করে উচ্ছেদ করা হবে বলে জানিয়েছেন।
যার সূত্র ধরেই সোমবার শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। প্রথম দুইদিনে অন্তত ৭০ একর নদীর জমি উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.