আগামী ঈদে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে নামাজ পড়তে পারবে - ড. ইউনূসের প্রতিশ্রুতিকে ঘিরে আয়োজন
কক্সবাজারে আগামীকাল রবিবার (২৪ আগস্ট) থেকে শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন। ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। এতে যোগ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশের প্রতিনিধি ও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস গত রমজানে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আগামী ঈদে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে নামাজ আদায় করতে পারবে। তার সেই প্রতিশ্রুতিকে বাস্তবে রূপ দিতে এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের (৩০ সেপ্টেম্বর) আগে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ সৃষ্টি করতেই কক্সবাজারে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
২০২৫ সালের রমজান মাসে উখিয়ার একটি ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতারে যোগ দিয়ে ড. ইউনূস বলেছিলেন, “এই ঈদ না হোক, আগামী ঈদে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ঈদ করবে।” তার সেই বক্তব্যে রোহিঙ্গাদের মধ্যে আশার আলো জাগলেও বাস্তবায়ন যে সহজ হবে না, তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। রাখাইনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক টানাপোড়েন এ প্রক্রিয়াকে কঠিন করে তুলছে। তবুও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কমতি রাখা হচ্ছে না। তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ এককভাবে চাইলে প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারবে না। তবে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্বনেতাদের সঙ্গে আলোচনায় যে আশার কথা জানিয়েছেন, সেটি বাস্তবায়নে সরকার নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, কক্সবাজারের সম্মেলনে প্রায় ৪০টি দেশের প্রতিনিধি, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। তিনি বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে সবচেয়ে বড় সম্মেলন হবে, যেখানে ১৭০টি দেশ অংশ নেবে। এরপর দোহা, কাতারেও আরেকটি সম্মেলনের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব আয়োজনের লক্ষ্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোরালো করা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর ফলে বর্তমানে অন্তত সাড়ে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত রয়েছে বাংলাদেশে। নতুন এই চাপ বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ ও নিরাপত্তার ওপর বাড়তি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাখাইনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি, মিয়ানমারের রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সীমান্তে চলমান সংঘাতের কারণে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম শুরু করা কঠিন হবে। তবুও অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ড. ইউনূস রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করতে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। কারণ এটি সফল হলে তার গ্রহণযোগ্যতা যেমন বাড়বে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিশ্লেষকদের মতে, কক্সবাজারের এই সম্মেলন শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রোহিঙ্গা ইস্যুকে নতুন করে আলোচনায় আনবে।
জাতিসংঘ অধিবেশন ও দোহা সম্মেলনের আগে কক্সবাজারের এই আয়োজনকে একটি ফলোআপ প্ল্যাটফর্ম” হিসেবে দেখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানো এবং মিয়ানমারকে আলোচনার টেবিলে আনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হবে।
কক্সবাজারে ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে ঘিরে এখন নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন কখন, কীভাবে শুরু হবে তা এখনও অনিশ্চিত। রাখাইনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে থাকলেও বাংলাদেশ সরকারের আশাবাদী মনোভাব এবং প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক তৎপরতা এ প্রক্রিয়াকে নতুন গতি দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.