কারাবন্দী এক শ্রমিক লীগ নেতার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করা নিয়ে ফরিদপুরের মধুখালীতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আলোচনায় আসা ওই শ্রমিক লীগ নেতার নাম মির্জা মাজহারুল ইসলাম ওরফে মিলন। তিনি চিনিকল শ্রমজীবী ইউনিয়ন এবং মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
ফরিদপুর চিনিকলের শ্রমিক শাহ মোহাম্মদ রাজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি। গত ১০ জুলাই তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। এ রায়ের পর থেকে কারাগারে আছেন মিলন।
এরই মধ্যে ফেসবুক পোস্ট আলোচনায় আসার পর জনমনে প্রশ্ন উঠেছে- কারাগারে বসেই ওই নেতা ফেসবুক চালাচ্ছেন কি-না। তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, কারাগারে বসে ফেসবুক কিংবা মোবাইল চালানোর সুযোগ নেই। সাজাপ্রাপ্ত ওই শ্রমিক লীগ নেতা কারাগারে ফেসবুক চালাচ্ছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ‘মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদ’ নির্বাচনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য তিনি মনোনয়নপত্র কিনেছেন। তার পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন, তার ভাই মির্জা শাহরিয়া লোটাস। মূলত ওই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তার ফেসবুক আইডি থেকে এই পোস্ট দেওয়া হয়েছে।
মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে গত সোমবার (২৫ আগস্ট) "Mirza Milon" নামে ওই ফেসবুক আইডি থেকে পরপর তিনটি পোস্ট দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সেই পোস্ট আবার একই আইডি থেকে শেয়ার দেন তিনি। পোস্টগুলোতে নিজেকে সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করে মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী সমাজের কাছে ‘দোয়া, আশীর্বাদ ও সমর্থন’ প্রত্যাশা করেন।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার ছবিটাও মির্জা মিলনের ফেসবুক আইডিতে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় আপলোড করা হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমার প্রিয় মধুখালী বাজার ব্যবসায়ীবৃন্দ। আসন্ন বাজার পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে মনোনয়ন কিনতে বাধা দেওয়ার পরে আপনাদের দোয়া-আশীর্বাদে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন কিনতে পেরেছি। সকলের কাছে দোয়া চাচ্ছি, আমার জন্য দোয়া করবেন। আপনাদের ভোটের মাধ্যমেই আপনাদের মাঝে ফিরে আসব, ইনশাআল্লাহ।’
এদিকে কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ জুলাই ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালত চিনিকল শ্রমিক রাজন হত্যায় দোষী সাব্যস্ত করে মাজহারুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। রায়ের পর তাকে আদালত থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
কারাগারে থেকে মির্জা মিলন কিভাবে ফেসবুক ব্যবহার করছেন জানতে চাইলে ফরিদপুর কারাগারের সুপার নজরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কারাগারে থেকে কোনো কয়েদির ফেসবুক ব্যবহার করার সুযোগ নেই। সে চালাচ্ছেও না। এটা কীভাবে চলছে আমার জানা নেই।
মাঝহারুলের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী ভাই মির্জা শাহরিয়া লোটাস বলেন, মাঝহারুল এ রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন। তাই এ নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোনো বাধা নেই। ‘মির্জা মিলন’ নামে ফেসবুক আইডি ব্যবহার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মিলনের ফেসবুক আইডিটি বর্তমানে ব্যবহার করছে তার ছেলে মুগ্ধ। বাবার অনুপস্থিতিতে ছেলে বাবার আইডি ব্যবহারে কোনো বাধা নেই বলে তিনি দাবি করেন।
হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির কাছে নির্বাচনের মনোনয়নপত্র বিক্রির ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মধুখালী বাজার ব্যবসায়ী পরিষদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আবু সাঈদ মিয়া বলেন, পরিষদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ফৌজদারি কোনো অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে নিম্ন আদালতের রায় উচ্চতর আদালতে আপিলের মাধ্যমে স্থগিত করলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন রায়ের স্থগিতাদেশ না পেলে বাছাইপর্বে ওই মনোনয়ন বাতিল হয়ে যাবে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.