
পিএইচডি গবেষণায় জালিয়াতি, ঘুষ লেনদেন ও যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও পদে বহাল থাকা, এই তিনটি অভিযোগ এখন ঘিরে রেখেছে বিআরআইসিএম (বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস)-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খানকে। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি ক্ষমতাসীন মহলের প্রভাব ব্যবহার করে নিজেকে রক্ষা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
মালা খান নিজের নামের আগে ব্যবহার করেন ‘ডক্টর’। তবে তার পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে শুরু থেকেই রয়েছে প্রশ্ন। তিনি দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি ডক্টরেট অর্জন করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এই বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত ও অবৈধ।
২০২৪ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এক চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানায়, মালা খানের পিএইচডি ডিগ্রি অবৈধ। এরপর ২০২৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা থেকেও একই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
তদন্তে দেখা যায়, মালা খানের পিএইচডি থিসিসটি ১৯৯৮–৯৯ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিশেষ বরাদ্দ প্রকল্পের গবেষণাপত্রের হুবহু অনুলিপি। এছাড়া তাঁর থিসিসে ক্রোয়েশিয়ার মেট্রোলজি হজ কেমিস্ট্রি গ্র্যান্ট রিপোর্ট থেকে সরাসরি তথ্য নকলের প্রমাণও পাওয়া যায়।
অভিযোগ আরও রয়েছে, তাঁর পিএইচডি সুপারভাইজর ছিলেন স্বামী কেএম মোস্তফা আনোয়ার, যিনি নিজে রসায়নে কোনো স্বীকৃত ডিগ্রিধারী নন। পিএইচডি জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগে মামলা হলে মালা খান তা থেকে রেহাই পেতে তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুব আলমকে ৭ কোটি টাকা ঘুষ দেন বলে অভিযোগ উঠে। নিজের ডায়রিতেই তিনি এই ঘুষের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন—যার হাতের লেখার সত্যতা তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নে মালা খান বলেন, “হ্যাঁ, হাতের লেখাটা আমার।”
যোগ্যতার শর্ত পূরণ না করেও ২০২২ সালে মালা খানকে বিআরআইসিএম-এর চিফ সাইন্টিফিক অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এই পদে প্রথম শ্রেণির বিজ্ঞান গবেষণায় ১৪ বছরের অভিজ্ঞতা আবশ্যক ছিল। কিন্তু যাচাই-বাছাই কমিটির তথ্যমতে, সে সময় মালা খানের অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র ৮ বছর ৭ মাস। তবুও প্রভাবশালী মহলের চাপে তাঁর আবেদন বাতিল না করে অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিআরআইসিএম-এর ১৩তম পরিচালনা পর্ষদের তদন্ত কমিটি ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পায়। এরপর ১৫তম সভায় তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সরকারি মহলের প্রভাবশালী একাংশের, বিশেষ করে তৎকালীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী এফ.এস. ওসমান–এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তিনি দীর্ঘদিন যাবত পদে বহাল আছেন বলে জানা যায়। অভিযোগ প্রসঙ্গে মালা খান বলেন, “আমার সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, সব মিথ্যা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু গোষ্ঠী আমাকে টার্গেট করছে।”
মালা খানের ভুয়া ডিগ্রি, ঘুষ ও প্রভাব খাটিয়ে পদে টিকে থাকার অভিযোগের বিচারাধীন মামলা বর্তমানে চলমান। সবকিছু নির্ভর করছে আদালতের রায়ের ওপর— সত্য প্রকাশ পাবে, নাকি আবারও প্রভাবশালীদের আশ্রয়ে রেহাই পাবেন মালা খান? সময়ই দেবে এই প্রশ্নের উত্তর।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.