পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ও আজ্ঞাবহ হয়ে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন বেসরকারি টিভি চ্যানেল মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীর ছেলে ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি। ২৪ জুলাইয়ে স্বৈরাচারীর পক্ষ নিয়ে আফ্রিদি সেলিব্রেটি ও অন্য কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দিয়ে আন্দোলন বন্ধে প্ররোচিত করেছেন। এ ছাড়া যাঁরা দ্বিমত পোষণ করেছেন তাঁদের বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলার তদন্তে এমন তথ্য পেয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসামি তৌহিদ আফ্রিদিকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি পতিত সরকারের সুবিধাভোগী হয়ে আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, যা তিনি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তবে অনেক তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করছি। বিশেষ করে তাঁর তিনটি ডিভাইস পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’
এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন বলেন, ‘আসামি সরাসরি একজন মিডিয়া সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তিনি টিভি চ্যানেলের পরিচালক হয়ে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের বিপক্ষে লাইভ প্রচার করে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালান। পাশাপাশি ছাত্র-জনতার দাবিকে উপেক্ষা করে আন্দোলন বিরোধীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ জোগান। তাঁর এমন উসকানিমূলক কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসী, রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী নির্বিচারে গুলিবর্ষণে আসাদুল হক বাবু মৃত্যুবরণ করেন।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, মামলা তদন্তকালে আসামির ব্যবহৃত মোবাইল, সিপিইউ ও আই ম্যাক জব্দ করা হয়েছে, যা আইটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনের বিপক্ষে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচার কার্যক্রম চালিয়ে আন্দোলন বিরোধী অবস্থান নেন। জিজ্ঞাসাবাদকালে তাঁর কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও উপাত্ত পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এদিকে গতকাল শনিবার যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় রিমান্ড শেষে তৌহিদ আফ্রিদিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে এই আদেশ দেন।
দুপুর ১২টার দিকে তৌহিদ আফ্রিদিকে আদালতে হাজির করা হয়। তাঁকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক খান মো. এরফান তাঁকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়েছে, মামলাটি তদন্তের স্বার্থে আসামিকে জেল হাজতে আটক করে রাখা বিশেষ প্রয়োজন। আসামি জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক হওয়ার আশঙ্কাসহ মামলার তদন্তকাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এরপর দুপুর ২টা ৫৬ মিনিটের দিকে তাঁকে এজলাসে তোলা হয়। এ সময় তাঁর মুখে মাস্ক, মাথায় হেলমেট, হাতে হাতকড়া, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছিল। ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাঁকে এজলাসে তোলা হয়। এরপর দুপুর ২টা ৫৮ মিনিটের দিকে বিচারক এজলাসে ওঠেন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ খায়রুল ইসলাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাইয়ুম হোসেন নয়ন জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। গত ২৪ আগস্ট রাতে বরিশাল থেকে তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ২৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার আসাদুল হক বাবু হত্যা মামলায় তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাঁকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে অংশ নেন মো. আসাদুল হক বাবু। দুপুর আড়াইটার দিকে আসামিদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন আসাদুল। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় গত বছর ৩০ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জয়নাল আবেদীন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় আসামির তালিকায় নাসির উদ্দিন ও তৌহিদ আফ্রিদির নামও রয়েছে। এর আগে গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন ১৮ আগস্ট এই মামলায় তাঁর পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে গত ২৩ আগস্ট তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।