গাজীপুরের শ্রীপুরে অটোরিকশা পার্টস ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেনকে র্যাব সদস্যদের দ্বারা আটকের প্রতিবাদে শ্রীপুর-বরমী সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা থেকে বরমা চৌরাস্তা এলাকায় তারা সড়ক অবরোধ করে র্যাবের গাড়ি আটকে রাখেন এবং মোশারফ হোসেনকে মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন শ্রীপুর উপজেলার বরমী মধ্যপাড়া গ্রামের আহম্মদ আলীর ছেলে। তিনি বরমা চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকান নিয়ে অটোরিকশার পার্টসের ব্যবসা করতেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীরা জানান, বিকেলের দিকে র্যাব সদস্যরা দুটি গাড়িতে করে এসে মোশারফ হোসেনের দোকানে ঢুকে তাকে আটক করে। তারা দাবি করেন, র্যাব সদস্যরা গাড়িতে করে আগেই অস্ত্র নিয়ে এসে মোশারফ হোসেনকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে তা দোকানে রেখে দেন। তবে, কী ধরনের অস্ত্র ছিল তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারেননি।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, ঘটনাস্থলে র্যাবের উপস্থিতি দেখে তারা সড়কে অবস্থান নেন এবং র্যাবের গাড়ি ঘেরাও করে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। খবর পেয়ে শ্রীপুর থানা পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়, কিন্তু তারা বিক্ষোভকারীদের সরাতে ব্যর্থ হয়।
পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে যৌথবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কয়েকজনকে আটক করেছে বলে জানা যায়। এলাকাবাসীরা অভিযোগ করেন, বরমা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম লিটনের নির্দেশেই র্যাব সদস্যরা মোশারফ হোসেনকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে অস্ত্রসহ আটক করে। তার (লিটনের) বিচার দাবি করে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবরোধ অব্যাহত রাখেন।
শ্রীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আব্দুল বারিক বলেন, ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেনকে অনেক আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের প্রশ্ন হলো, কেন তাকে র্যাব আটক করেছিল? তবে তার কাছে অস্ত্র ছিল কিনা এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না।
র্যাব-১ গাজীপুর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কমান্ডার পুলিশ সুপার (এসপি) কে এম এ মামুন খান চিশতী বলেন, র্যাব উত্তরা টিম ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেনকে আটক করেছে। আমরা এখনো ঘটনাস্থলে আছি। থানা পুলিশ এবং আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এখানে উপস্থিত রয়েছেন। বিষয়টি যৌক্তিক না অযৌক্তিক, প্রকৃত ঘটনা কী? তা বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। তারপর থানায় নেওয়া হবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন যে, র্যাব সদস্যরা অস্ত্র এনে মোশারফ হোসেনের দোকানে রেখে তাকে ফাঁসিয়েছে। এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। আমাদের এখানে এ ধরনের কিছু করার কোনো সুযোগ নেই।
মোশারফ হোসেনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে কিনা?এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছি না। আমরা এখনো বাহিরে আছি, গাড়িতে উঠিনি।
প্রসঙ্গত, স্থানীয়দের মতে, বরমা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম লিটন ২০২৩ সালের ৯ জুলাই অস্ত্রসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সম্প্রতি, শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে বরমা এলাকায় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। এর প্রতিবাদে ওই রাতেই স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেন এবং রাত ৩টা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যান। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।