কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিজেদের উদ্যোগে বোর্ড পরীক্ষায় বসেছে শিক্ষার্থীরা। পঞ্চম, নবম ও দ্বাদশ শ্রেণীর মিডটার্ম পরীক্ষা শুরু হয়েছে গতকাল, যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এক্সামিনেশন বোর্ড অব রোহিঙ্গা রিফিউজিস’র তত্ত্বাবধানে। পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৫০টিরও বেশি কমিউনিটি-ভিত্তিক স্কুলের শিক্ষার্থী। আয়োজকরা জানিয়েছেন, এটি সম্পূর্ণভাবে মিয়ানমারের নতুন পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষা বোর্ডের নিয়মকানুন অনুসরণ করে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কমিউনিটি স্কুল নিউ লাইফ কমিউনিটি হাইস্কুলের শিক্ষক ইয়াজুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই মূলত এ পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে আমাদের নিজেদের উদ্যোগে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখছি, শরণার্থী ক্যাম্পে বেড়ে ওঠা শিশু-কিশোররা কোনো মূল্যায়ন পদ্ধতির আওতায় আসতে পারছে না, ফলে তাদের শিক্ষার পথ অসম্পূর্ণই থেকে যাচ্ছে। সে শূন্যতা পূরণ করতে এবং তাদের পড়াশোনাকে আরো সংগঠিত ও কাঠামোবদ্ধ করতে আমরা নিজেরাই এ পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি। কমিউনিটির শিক্ষক ও স্থানীয় নেতৃত্বই এর পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছে। কমিউনিটি স্কুলগুলো মিলে গঠন করা হয়েছে একটি বোর্ড।’
মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর থেকে শরণার্থী ক্যাম্পগুলোয় অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম চললেও এবারই প্রথম পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে আনুষ্ঠানিক কাঠামোয়। এ শিক্ষা কার্যক্রমের পেছনে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, যারা শিবিরের ভেতর স্কুল পরিচালনা করে আসছেন। এসব সংগঠনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা লাইফ ডেভেলপমেন্ট হাইস্কুল, রোহিঙ্গাস ফিউচার লাইফ, নিউ লাইফ কমিউনিটি হাইস্কুল, মাইউ লাইট কমিউনিটি হাইস্কুলসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় চলছে। তারা নিজেদের ফেসবুক পেজে পরীক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রমের ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ, শিক্ষকদের তত্ত্বাবধান ও কমিউনিটির সমর্থনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। পরীক্ষা আয়োজনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও লক্ষ্য করা গেছে উৎসাহ-উদ্দীপনা।
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম মাইউ লাইট কমিউনিটি হাইস্কুল। বর্তমানে তারা ক্যাম্প-১৩-এ প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদান করছে। এ বিদ্যালয়ে কাজ করছেন প্রায় ২০ জন রোহিঙ্গা শিক্ষক।
পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করছে এক্সামিনেশন বোর্ড অব রোহিঙ্গা রিফিউজি। রোহিঙ্গা শিবিরে কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন প্রায় ৫৩টি স্কুল চলতি বছরের এপ্রিলে এক হয়ে গঠন করে এ বোর্ড। রোহিঙ্গা শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাগত মানোন্নয়নই বোর্ডটির লক্ষ্য।
জানতে চাইলে সরকারের আরআরআরসি কার্যালয়ের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিজেদের উদ্যোগে দুই শতাধিক স্কুল স্থাপন করেছে ক্যাম্পগুলোয়। এনজিওগুলোর চেয়ে অনানুষ্ঠানিক এ শিক্ষা কার্যক্রমের প্রতি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আগ্রহ বেশি। নিজ ভাষার পাশাপাশি অর্থের বিনিময়ে পাঠদান হওয়ায় তুলনামূলক ভালো শিক্ষা দেয়া হয়। এজন্য স্কুলগুলোর জন্য আলাদা কেন্দ্রীয় বোর্ডের মাধ্যমে সমন্বিত পরীক্ষাও নেয়া হয়। এ কার্যক্রমের সঙ্গে অবশ্য আমাদের কিংবা ক্যাম্পের এনজিওগুলোর শিক্ষা কর্মকাণ্ডের কোনো সম্পর্ক নেই
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.