যেকোনো আদালত কোনো ব্যক্তিকে ফেরারি আসামি ঘোষণা করলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না, কোনো নির্বাচনী আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাকে অবশ্যই ‘না ভোট’-এর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে বিধানসহ একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব এনে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন আইন মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সরকারের কাছে পাঠানো সংস্কারের প্রস্তাবের সার্বিক বিষয় সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনি আইন সংস্কার নিয়ে মাসখানেক ধরে দফায় দফায় পর্যালোচনা করে নির্বাচন কমিশন-ইসি। এরপর আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়, সেখানে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
নতুন সংশোধনীতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে আরো স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও জবাবদিহিমূলক করবে বলে আশা করছে কমিশন।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, এবারকার সংশোধনীতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিভিন্ন দিক আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে।
প্রথমত, আদালত কর্তৃক ঘোষিত ফেরারি আসামিরা ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এ ছাড়া কোনো প্রার্থী যদি হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেন বা তথ্য গোপন করেন, নির্বাচন কমিশন তা তদন্ত করে তার প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে।
এমনকি নির্বাচিত হওয়ার পরও মেয়াদকালে বিষয়টি প্রমাণিত হলে সংসদ সদস্যের পদ বাতিল করা হবে এবং সংশ্লিষ্ট আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে।
ভোটকেন্দ্র পরিচালনায় প্রিজাইডিং অফিসারকে সর্বময় ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি চাইলে ভোটগ্রহণ বন্ধ বা পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। পূর্ববর্তী নিয়মে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিতে হতো। তবে এবার প্রিজাইডিং অফিসারকেই ভোটকেন্দ্রে একক কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে।
সংশোধনীতে ‘না ভোট’ বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কোনো নির্বাচনী আসনে একক প্রার্থী থাকলেও সরাসরি তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা যাবে না। তাকে অবশ্যই ‘না ভোট’-এর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। যদি দেখা যায়, প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে ‘না ভোট’ বেশি পড়েছে, তাহলে পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হবে।
তবে দ্বিতীয়বারও একই প্রার্থী থাকলে আর পুনর্নির্বাচন হবে না। এই বিধান ভোটারের মতামত প্রতিফলনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা কমিশনের।
জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার ক্ষেত্রেও নিজস্ব প্রতীক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক প্রার্থীকে তার দলীয় প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। একই সঙ্গে নির্বাচনী এজেন্ট হতে হলে সংশ্লিষ্ট আসনের ভোটার হতে হবে, যা আগে বাধ্যতামূলক ছিল না।
রিটার্নিং অফিসারদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। তারা চাইলে একটি কেন্দ্র, একাধিক কেন্দ্র এমনকি পুরো আসনের নির্বাচন ও ফলাফল স্থগিত করতে পারবেন। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া আরো নিয়ন্ত্রিত ও সুষ্ঠু হবে বলে মনে করছে ইসি।
নতুন সংশোধনীতে ইভিএম ব্যবহার পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে। পরিবর্তে পোস্টাল ব্যালট চালু করা হয়েছে। পোস্টাল ব্যালটের আওতায় প্রবাসী ভোটাররা, সরকারি কাজে বাইরে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এবং কারাগার বা অন্য কোনো নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। আগে সময়ের সীমাবদ্ধতার কারণে এসব ভোটার ভোট দিতে পারতেন না।
গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা নিয়েও সংশোধনীতে নতুন ধারা যুক্ত হয়েছে। এখন থেকে ভোটগণনার সময় সাংবাদিকরা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকতে পারবেন। তবে শর্ত হলো, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। একই সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তি—যেমন প্রার্থী, এজেন্ট, রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী প্রিজাইডিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া ভোটকেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে বা অবস্থান করতে পারবে না।
নির্বাচনী ব্যয়ের সীমা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। তবে ব্যয়ের হিসাব নির্ধারণে নতুন একটি ফ্লেক্সিবিলিটি যুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে প্রার্থী প্রতি ভোটারের জন্য ১০ টাকা বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ, যেটি বেশি হবে সেই অনুযায়ী ব্যয় করতে পারবেন।
কমিশনের মতে, ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যাগত কারণে এ বিধান অধিকতর ন্যায়সংগত হবে।
এ ছাড়া প্রার্থীদের জামানতের পরিমাণ ২০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যাতে ভোগান্তি ও পরিবেশ দূষণ কমানো যায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হলো, নির্বাচনী আসনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসেবে থাকতে পারবেন না। এতে স্বার্থের সংঘাত এড়ানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার সানাউল্লাহ বলেন, ‘এসব সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ, প্রতিযোগিতামূলক ও জনগণের আস্থা অর্জন করবে।’
তিনি আশা প্রকাশ করেন, আইন মন্ত্রণালয় দ্রুত এ সংশোধনী চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে এবং তা কার্যকর হলে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নতুন আঙ্গিকে অনুষ্ঠিত হবে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.