অবশেষে বদলির আদেশ পেলেন টেকনাফ থানার বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গিয়াস উদ্দিন। দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে ‘ইয়াবা এক্সচেঞ্জ’ ব্যবসা, মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশ, চাঁদাবাজি ও মামলা বাণিজ্যের অভিযোগ থাকলেও এতদিন টিকেই ছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফউদ্দিন শাহীন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাকে টেকনাফ থানা থেকে চকরিয়া সার্কেলে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়। তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূর।
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে টেকনাফ থানার মালখানাকে কেন্দ্র করে ভয়ঙ্কর ‘ইয়াবা এক্সচেঞ্জ সিন্ডিকেট’-এর খবর প্রকাশ পায়। নিউজে অভিযোগ হিসেবে উঠে আসে- ওসি গিয়াস ও তার ঘনিষ্ঠ সহকারী এসআই ননি বড়ুয়ার নেতৃত্বে মালখানায় রাখা আসল ইয়াবা সরিয়ে নিম্নমানের বা নকল ইয়াবা জমা রাখা হয়।
র্যাব, বিজিবি বা পুলিশের অভিযানে আটক হওয়া ইয়াবা থানায় জমা পড়ার পরই গোপনে তা হাওয়া হয়ে যায়। এরপর কাগজে-কলমে যা দেখানো হয়, আদালতেও তাই জমা যায়। ল্যাবে পাঠানো হয় মাত্র কয়েকটি পিস নমুনা- ফলে আসল ইয়াবার মান যাচাইয়ের কোনো সুযোগ থাকে না।
থানার ভেতরকার একাধিক কর্মকর্তার দাবি- সব অপকর্মে ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে কাজ করেন এসআই ননি বড়ুয়া। প্রতি ১০ হাজার পিস ইয়াবা বদলের বিপরীতে হাতবদল হয় আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকা।
চলতি বছরের ৬ এপ্রিল এসআই ননি বড়ুয়াসহ আট কর্মকর্তার বদলির আদেশ হয়। তাকে পেকুয়া থানায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনও তিনি টেকনাফ থানাতেই বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
অভিযোগ আছে- ওসি গিয়াসের ছত্রছায়ায় তিনি নিয়মিত থানায় বসেন এবং আগের সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন। এমনকি বদলি ঠেকাতে পুলিশের উচ্চপর্যায়েও মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ- টেকনাফ থানা এখন ইয়াবা ব্যবসার নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। গিয়াস-ননি জুটির নেতৃত্বে দুটি সিন্ডিকেট সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। একটি সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে হ্নীলার মুহিবুল্লাহ ও সাইম, যারা ওসির নির্দেশে ইয়াবা সংগ্রহ ও বিক্রির দায়িত্বে।
অপর সিন্ডিকেটে রয়েছে ইসলামাবাদের নেজাম উদ্দিন ও সবুর সওদাগর- যাদের সঙ্গে ননির ব্যক্তিগত যোগাযোগ। তারা গভীর রাতে নির্দিষ্ট আস্তানায় বসে লেনদেনের হিসাব চূড়ান্ত করে।
মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন- তারা নিজেরা ইয়াবা দেখেন না। সবই ননির নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে ফর্মে লেখা থাকে ১০ হাজার পিস কিন্তু আসলেই জমা পড়েছে কত- তা নিশ্চিত নয়।
স্থানীয়দের অভিমত- শুধু বদলি নয়, বরং নিরপেক্ষ তদন্ত ও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে ‘মালখানা’ ও ‘মালচোরদের’ আড়ালে ইয়াবা সিন্ডিকেট নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় হুমকিতেই থেকে যাবে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.