‘রাতের বেলায় কেউ বাইপাইল মসজিদের সামনে পোড়া লাশগুলো রেখে আসেন। এর মধ্যে, দুটি লাশের অভিভাবকদের পাওয়া যায়নি। সেই বেওয়ারিশ লাশ দুটো আমতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়।’
জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের সময় ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে ছয়জনের লাশ পোড়ানো হয় জানিয়ে জবানবন্দিতে এসব কথা বলেন, ভাঙারি ব্যবসায়ী মতিবর রহমান (বুইদ্দা)। রাষ্ট্রপক্ষের ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি।
জুলাই- আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের সময় আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মতিবর রহমান তার জবানবন্দি পেশ করেন। সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণের পর তাকে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরার করেন। এরপর মামলার কার্যক্রম বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
জবানবন্দিতে মতিবর রহমান বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট দুপুর বেলা দুইটার পর যখন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ করে, তখন ছেলেরা মিছিল বের করে। আশুলিয়া থানার সামনে দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময় পুলিশ গুলি করে। এরপর গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের লাশগুলো (একজন জীবিত ছিলেন) থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে রেখে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। বিকেল চারটা পর্যন্ত গুলি চলতে থাকে। পরে সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ গুলি করতে করতে সেনাবাহিনীর গাড়ি দিয়ে চলে যায়।
সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই জায়গাতেই (আশুলিয়া থানা) ছিলেন বলেও জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান।
তিনি বলেন, রাতের বেলা তিনি বাসায় চলে যান। এই লাশগুলো থানার সামনেই পোড়ানো হয় এবং কেউ রাতের বেলায় বাইপাইল মসজিদের সামনে রেখে আসে। পরদিন ৬ আগস্ট দুপুর ১২টার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আসেন এবং বেলা দুইটার দিকে সেনাবাহিনী আসে বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন মতিবর রহমান।
তিনি বলেন, ‘ছয়টি লাশ গাড়ি থেকে বের করে পলিথিনে প্যাকেট করি এবং জানাজা পড়ানো হয়।’এর মধ্যে চারজনের মোবাইল নম্বর পাওয়া যায় এবং তাদের অভিভাবকদের ফোন করা হলে তারা এসে লাশ নিয়ে যান বলে জানান মতিবর রহমান।
তিনি বলেন, ‘দুটি লাশের অভিভাবকদের পাওয়া যায়নি। সেগুলো আমতলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। একদিন পর আবুলের স্ত্রী হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া কোনো লাশ দাফন করেছি কি না, জিজ্ঞাসা করলে আমি বলি যে হলুদ গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়া একটি লাশ পেয়েছি এবং দাফন করেছি।’