কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবনিয়া সেগুনবাগিচা এলাকার জসিম উদ্দিন (৫৭) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, স্ত্রী ও পরকীয়া প্রেমিক মিলে পরিকল্পিতভাবে খুন করেছে জসিম উদ্দিনকে। এ ঘটনায় প্রেমিক আব্দু রাজ্জাককে (৩৩) গ্রেপ্তার করেছে পেকুয়া থানা পুলিশ।
জানাগেছে, চলতি বছরের ১০ আগস্ট গভীর রাতে নিজ বাড়িতে খুন হন জসিম উদ্দিন।তিনি ওই এলাকার মো.নুর আহমদের পুত্র। ঘটনার পরদিন নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার (৪৫) নিজেই বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় মামলা করেন (মামলা নং ০৮/২৫)। মামলায় দুইজনের নাম উল্লেখ করে আরও ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, পূর্ব শত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তার স্বামীকে।
পুলিশ তখন সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিবেশী মনছুর আলম (৪৫) ও সাপেরগারা এলাকার জহিরুল ইসলাম (৫৫) কে আটক করে কারাগারে পাঠায়। কিন্তু পরে এলাকাবাসী অভিযোগ তোলে নিরপরাধ মানুষকে পরিকল্পিতভাবে আসামি করে আসল হত্যাকারীদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা মানববন্ধনও করে। মামলায় যে দুজনকে আসামি করা হয়েছে তাদের একজন সেলিনার প্রবাসি ছেলের প্রেমিকার আপন চাচা অপরজন নানা। এদিকে ঘটনার পর থেকেই গা-ঢাকা দেন নিহতের স্ত্রী সেলিনা আক্তার। বাড়ি থেকে গরু, ধানসহ প্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে নেওয়ায় সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
এলাকায় গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি হয়েছেন জসিম উদ্দিন। স্থানীয়রা জানান, একই এলাকার আবুল কাসেমের ছেলে আব্দু রাজ্জাকের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে সেলিনার। রাজ্জাক সেলিনার এক ছেলের বন্ধু। জসিমের দুই ছেলে প্রবাসে থাকেন। বাড়িতে স্বামী ছাড়া আর অন্য কেউ না থাকায় সুযোগ নিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। রাজ্জাক নিয়মিত জসিমের বাড়িতে যাতায়াত করতেন।
একপর্যায়ে পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারেন জসিম উদ্দিন। স্ত্রীকে সতর্ক করা ও রাজ্জাককে বাড়িতে না আসার নিষেধ করায় ক্ষুব্ধ হন দু’জনেই। পরকীয়ার সম্পর্ক প্রকাশ হয়ে পড়ায় প্রতিশোধের পরিকল্পনা নেয় তারা এবং নৃশংসভাবে জসিমকে খুন করে। পুলিশ জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে রাজ্জাক স্বীকার করেছে, ওই রাতে সেলিনার সহযোগিতায় ছোরা দিয়ে কুপিয়ে ও গলায় আঘাত করে হত্যা করা হয় জসিম উদ্দিনকে।
এ ঘটনার এক মাস পর নিহতের পিতা মো. নুর আহমদ ১৪ সেপ্টেম্বর চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন (সিআর মামলা নং ২১৯৮/২৫)। আদালতের নির্দেশে পেকুয়া থানায় নতুন মামলা রুজু হয় (মামলা নং ১৭/২৫)।
নতুন মামলায় আসামি করা হয় প্রয়াত জসিম উদ্দিনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার, পরকীয়া প্রেমিক আব্দু রাজ্জাক এবং চকরিয়ার হারবাং ইউনিয়নের জামাল উদ্দিনকে (৩৭)। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, পরকীয়ার সম্পর্ক জানাজানি হওয়ায় স্ত্রী ও প্রেমিক মিলে পরিকল্পিতভাবে ছোরা দিয়ে আঘাত ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে জসিম উদ্দিনকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আব্দু রাজ্জাক এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী। প্রায় এক বছর আগে তিনি প্রতিবেশী আবদুল কাদের নামে এক ব্যক্তিকে হত্যা করে পলাতক ছিলেন। পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান করে সেলিনার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যান।
পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সুনয়ন বড়ুয়া বলেন, হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আব্দু রাজ্জাক হত্যার দায় স্বীকার করেছে। স্ত্রী সেলিনা আক্তারকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.