নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মনজুরুল হক নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা দাবি করে ভুয়া তথ্যে পুলিশে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সম্রাট হাসান তুহিন নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। ওই যুবকের স্ত্রী হোসনা বেগম গত ১৬ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক বরাবর এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত সম্রাট হাসান তুহিন সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা থানার শেখেরগাঁও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। তিনি বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানায় কনস্টেবল পদে কর্মরত রয়েছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনজুরুল হক নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখুপুর গ্রামের বাসিন্দা। অভিযোগকারী হোসনা বেগম নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা হিলোচিয়া গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে।
অভিযোগে বলা হয়, ২০১২ সালে হোসনা বেগমের সঙ্গে সম্রাট হাসান তুহিনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের দুই বছর পর ২০১৪ সালে তুহিন পুলিশের কনস্টবেল পদে চাকরিতে যোগদান করেন। চাকরিতে যোগদানের সময় তিনি নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখুপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মিথ্যা তথ্যে সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকে হলফনামা তৈরি করেন। এতে তুহিন নিজেকে মনজুরুল হকের মেয়ের পুত্র (দৌহিত্র) হিসেবে দাবি করেন। পরে সেই হলফনামা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার কোটা সুবিধা নিয়ে পুলিশে চাকরি নেন তুহিন। তিনি দীর্ঘদিন নেত্রকোনা জেলার মদন থানায় কর্মরত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরির সুবাদে তিনি বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বেপরোয়া জীবনযাপন করতেন। এমনকি ছুটি না নিয়েও তিনি মাসের পর মাস কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। জুলাই বিপ্লবের সময় মদনে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে হামলায় সরাসরি জড়িত থাকায় তুহিনকে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানায় বদলি করা হয়। বর্তমানে তিনি রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানায় কর্মরত আছেন।
হলফনামাসহ এ সংক্রান্ত সব কাগজপত্র ও তুহিনের ছবি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনজুরুল হককে দেখানো হলে তিনি বলেন, তুহিন নামে আমার কোনো নাতি নেই। এমনকি হলফনামায় থাকা স্বাক্ষরটিও আমার নয়, কেউ হয়ত প্রতারণা করেছে। আমার দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তবে মোহনগঞ্জে ও সুনামগঞ্জে আমার মেয়েকে বিয়ে দেইনি। যে এই প্রতারণা করেছে আমি তার শাস্তি দাবি করছি।
নেত্রকোনা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সম্রাট হাসান তুহিন জেলার মদন থানায় কর্মরত থাকাকালীন ২০২৩ সালের ৫ জুলাই হতে ১৫৬ দিন কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া থানার সিআর ৭২৯/২৩ নম্বর মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি তুহিন। ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তুহিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ময়মনসিংহ মহানগর জুডিশিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তারপরও তিনি চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
ওই পুলিশ সদস্যের স্ত্রী অভিযোগকারী হোসনা বেগম জানান, তুহিন প্রতারণা করে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মনজুরুল হকের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করে নিজেকে নাতি পরিচয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি গ্রহণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক তার নানা নন।
তবে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে পুলিশ কনস্টেবল সম্রাট হাসান তুহিন বলেন, স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক ঝগড়া হওয়ার কারণে এমন অভিযোগ করেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক আমার নানা এটাই সত্যি। তার সনদেই পুলিশেই চাকরি নিয়েছি। অফিসিয়ালি নিয়মিত আমাদের ভেরিফিকেশন হয়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণা করে থাকলে এতদিনে চাকরি থাকার কথা নয়।
তিনি আরও বলেন, চেক জালিয়াতি সংক্রান্ত একটা মামলায় আমার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হয়েছিল। একজন প্রতারণা করে সেই মামলাটা করেছিল। অভিযোগ থাকতেই পারে, প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ দোষী নয়।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) অভিযোগ বিষয়ে ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি ঢাকা অফিসে পাঠানো হবে। পরবর্তীতে নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধি অনুযায়ী আমাদের এখতিয়ারের মধ্যে হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Cox's Bazar Office: Main Road, Kolatli, Cox's Bazar, Bangladesh.
Ukhia Office: Main Road, Ukhia, Cox's Bazar, Bangladesh.
Email: shimantoshohor@gmail.com
© 2025 Shimantoshohor.com. All rights reserved.