1. admin1@shimantoshohor.com : ডেস্ক নিউজ • : ডেস্ক নিউজ •
  2. nrakash261@gmail.com : সীমান্ত শহর ডেস্ক: : NR Akash
  3. admin@shimantoshohor.com : প্রকাশক : সীমান্ত শহর ডেস্ক: Islam
  4. alamcox808@gmail.com : ডেস্ক নিউজ : : ডেস্ক নিউজ :
শিরোনামঃ

উখিয়া-টেকনাফে ভোটযুদ্ধের সমীকরণে অভিজ্ঞতা নাকি নতুনত্ব!

✍️ প্রতিবেদক: সরওয়ার আলম শাহীন •

  • আপডেট সময়ঃ রবিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৫ বার পঠিত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ তীব্র আকার ধারণ করেছে। বহু বছর ধরে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই এলাকায় এবারও জোরালো প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের অভিজ্ঞ নেতা ও চারবারের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পথে একধাপ এগিয়ে রয়েছেন।

তবে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে কক্সবাজার জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক এম আব্দুল্লাহও মনোনয়ন পাওয়ার জন্য তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালাচ্ছেন। টেকনাফের দলের একটি অংশ তার পক্ষে মাঠে রয়েছে এবং আলাদা কর্মসূচি পালন করছে। এম আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগ আমলে বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার, তার ছেলে আলোকে হারিয়েছেন, এসব ঘটনায় দলের প্রতি তার আনুগত্যকে আরও দৃঢ় করেছে।

 

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী কক্সবাজার জেলার আমির ও হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী জাতীয় পর্যায়ে নতুন হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় এবং জনপ্রিয়। তিনি মাঠে নামার মাধ্যমে কক্সবাজার-৪ আসনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। উখিয়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সোলতান আহমদ বলেন, জনগণ সৎ ও যোগ্য নেতাকে সংসদে দেখতে চায়, আনোয়ারী সেই যোগ্যতা রাখেন।

একসময় এই আসনে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি। তবে দুর্নীতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মাদক চোরাচালানের অভিযোগে তিনি কারাগারে থাকায় দলটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। দলীয় বিভাজন ও জনসমর্থনের অভাবে এখন আওয়ামী লীগের কার্যক্রম প্রায় স্থবির। স্থানীয় এক নেতা বলেন, দল মাঠে নামতেও ভয় পাচ্ছে।

 

উখিয়া-টেকনাফ আসনটি জাতীয়ভাবে সংবেদনশীল। প্রায় ১২-১৩ লাখ রোহিঙ্গা এ এলাকায় বসবাস করছে, যেখানে মাদক পাচার ও সন্ত্রাসের কারণে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবসময় অস্থিতিশীল থাকে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় অভিজ্ঞ, দক্ষ ও নির্লোভ নেতৃত্বের প্রয়োজন।

ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ২৬ হাজার ৯৭১, যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৭ হাজার ১৪১, নারী ভোটার ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮২৮ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ২ জন। ভোটারদের রাজনৈতিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণ ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম জয়ী হয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন শাহজাহান চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে ২০০১ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হন। যদিও ২০০৮ ও ২০১৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পরাজিত হন, তবে স্থানীয় পর্যায়ে তার জনপ্রিয়তা ও রাজনৈতিক প্রভাব এখনো অপরিসীম।

জাতীয় সংসদের হুইপ পদেও দায়িত্ব পালন করা শাহজাহান চৌধুরী দলকে সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। স্থানীয় স্কুল-কলেজ, অবকাঠামো উন্নয়ন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা, সমাজকল্যাণমূলক কাজগুলোতে তার অবদান স্মরণীয়।

শাহজাহান চৌধুরী দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দলের সংগঠন ও ঐক্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার পরিচ্ছন্ন ও বিতর্কমুক্ত রাজনৈতিক ইমেজ দলীয় নেতাদের মধ্যে উচ্চমানের প্রভাব তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন সমাবেশে তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে উখিয়াকে তিনি পৌরসভায় করবেন। পাশাপাশি উপজেলার ইউনিয়ন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং সীমান্ত এলাকা বালুখালীতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার বাণিজ্যের জন্য করিডোর চালু করা হবে।

উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জাতীয় নির্বাচন, তাই অভিজ্ঞ ও যোগ্য নেতার প্রয়োজন। শাহজাহান চৌধুরী সেই নেতৃত্ব দিতে পারবেন।

এ আসনে এখন পর্যন্ত এনসিপির তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। দলটির কোনো মনোনয়নপ্রত্যাশীর নাম এখনো শোনা যায়নি। তবে এবি পার্টি ও নেজামে ইসলাম পার্টির দুজন প্রার্থীর নাম প্রচারে এসেছে। এদের মধ্যে এবি পার্টি থেকে প্রার্থী হতে চান দৈনিক ইনকিলাবের কক্সবাজার অফিস প্রধান ও এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শামসুল হক শারেক। উখিয়া-টেকনাফে তিনি নিজের উদ্যোগে এবি পার্টির কিছু কার্যক্রম জারি রাখলেও তা উল্লেখ করার মতো কিছু নয়। আর নেজামে ইসলাম পার্টি দাবি করছে, এ আসনে তাদের প্রার্থী দলটির জেলা শাখার নায়েবে আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইয়াছিন হাবিব। এলাকায় তারও তেমন কোনো ভিত্তি নেই।

 

স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, এম আব্দুল্লাহর জনপ্রিয়তা এবং টেকনাফের দলের কিছু অংশের সক্রিয়তার কারণে মনোনয়ন প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। তবে নেতাকর্মীদের ধারণা শেষ পর্যন্ত প্রবীণ নেতা হিসেবে শাহজাহান চৌধুরীই মনোনয়ন পাবেন। এদিকে জামায়াতের নুর আহমদ আনোয়ারীর নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভাব ভোটের গতি পাল্টিয়ে দিতে পারে।

রাজনৈতিক পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, আসনটি এখন ‘অভিজ্ঞতা বনাম নতুনত্ব’ এবং ‘দলগত ঐক্য বনাম বিভাজন’ এর দ্বৈত লড়াইয়ের ময়দান। দলগুলো একত্রে না থাকার ফলে ভোট ভাগাভাগির আশঙ্কাও বাড়ছে, যা অন্য দলকে সুযোগ দিতে পারে।

আগামী নির্বাচনে কক্সবাজার-৪ আসনে কে জয়ী হবেন, তা নির্ভর করবে দলের ঐক্য, জনসমর্থন, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার দক্ষতার উপর।

পোষ্টটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© 2025 Shimanto Shohor
Site Customized By NewsTech.Com
error: Content is protected !!