জীবিত শিশুকে ‘জুলাই শহীদ’ দেখিয়ে মামলা বাণিজ্য করার অভিযোগে এনসিপি নেতা শাহজাহান সম্রাটের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে। কেরানীগঞ্জের বাস্তা ইউনিয়নের কুমলি গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান একসময় ইউপি সদস্য হতে চেয়েছিলেন। তবে উচ্ছৃঙ্খল স্বভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি। স্থানীয়দের দাবি, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর হঠাৎ করেই তিনি ‘বৈষম্যবিরোধী নেতা’ হিসেবে আবির্ভূত হন এবং ‘নতুন বন্দোবস্ত’-এর নামে এলাকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি নানা কৌশলে মামলার ভয় দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, শাহজাহান সম্রাট সব সময় সুবিধামতো দলে যোগ দেন—একবার এই দলে, আবার অন্য দলে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে বা সুবিধা দেয়, তিনি সেদিকেই চলে যান। তার ‘সিস্টেম’ এমনই—কারো বিপদে সুযোগ খুঁজে নেন তিনি।
বিএনপির চাপে আওয়ামী লীগে, আবার আওয়ামী লীগের চাপে বিএনপিতে—এই দ্বৈত পরিস্থিতিতে সুবিধা বুঝে রাজনৈতিক অবস্থান বদলান শাহজাহান।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, বিএনপির শাসনামলে শাহজাহান এলাকার রাস্তার উন্নয়ন কাজের টাকা আত্মসাৎ করেন। এরপর ভালো মানুষদের হয়রানি করে, তাদের বিপদে ফেলে নিজে ফায়দা তোলেন। সব মিলিয়ে শাহজাহান এলাকায় একের পর এক কাহিনি তৈরি করে চলেছেন।
আরেকজন অভিযোগ করে বলেন, শাহজাহান সম্রাট আমাদের কুমলি গ্রামেরই মানুষ। আগে তিনি বিএনপির রাজনীতি করতেন, পরে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন নেতার সঙ্গে পোস্টারিং ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তাকে দেখা গেছে। এখন আবার শোনা যাচ্ছে, তিনি নতুন করে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহজাহান আমাদের গ্রামের শত শত নিরীহ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা করেছেন—এমনকি তাদের বিরুদ্ধেও, যারা কখনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না।
কেউ কেউ বিএনপির রাজনীতি করলেও পরে আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে মেম্বার হন এবং চেয়ারম্যান আশকর আলীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। সেই চেয়ারম্যানের সঙ্গেও শাহজাহানের সম্পর্ক আছে বলে শোনা যায়।
বারবার রাজনৈতিক আদর্শ বদলে ক্ষমতার সুযোগ নেওয়া শাহজাহান সম্রাটের প্রতারণা একটি সুপরিকল্পিত কৌশল।
কেরানীগঞ্জের বাস্তা ইউপি সদস্য মনির হোসেন বাদল বলেন, ‘শাহজাহান তো চিটার (প্রতারক)। সে একবার বিএনপিতে যায়, একবার জাতীয় পার্টিতে, আবার একবার এনসিপিতে যোগ দেয়। ও আসলে একজন ব্যবসায়ী, রাজনীতিকে ব্যবসার মতো ব্যবহার করে। এখন সে এনসিপিতে আছে, কিন্তু দুইদিন পর হয়তো এখানেও থাকবে না। এলাকায় একটা লোক খুঁজে পাবেন না, যে বলে শাহজাহান ঠিক আছে। এবার সে আমার সঙ্গে মেম্বার নির্বাচন করেছে। একবার বিএনপি থেকে নির্বাচন করেছে, এবার করেছে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে—তবুও হেরে গেছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘অনেক নিরীহ মানুষের নামে সে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমি এই ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য। যদি আমার দ্বারা কেউ কষ্ট পায় বা অন্যায় হয়, মানুষ বলবে। আমি চার বছর মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অথচ শাহজাহান আমার ও আমার পাঁচ ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। যারা কোনো রাজনীতিতেই জড়িত না, তাদেরও মামলা দিচ্ছে, এটা বন্ধ হওয়া দরকার।’
এদিকে, সম্প্রতি কালের কণ্ঠে জীবিত শিশুকে ‘জুলাই শহীদ’ দেখিয়ে প্রকাশিত সংবাদের পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাহজাহান সম্রাটকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির ঢাকা জেলা কমিটি।
ঢাকা জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক মো. রাসেল আহমেদ বলেন, ‘শাহজাহান সম্রাটের বিরুদ্ধে একটি মামলার কথা শুনেছি, তবে সেটি সত্য কিনা এখনো নিশ্চিত না। এ বিষয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। আপাতত তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, দলীয় অনুমতি ছাড়াই তিনি একটি প্রগ্রাম করেছেন এবং ১৭ জুলাই নিজ উদ্যোগে শোডাউনও করেছেন, যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থী। এসব কারণেই তাকে শোকজ করা হয়েছে।’
শাহজাহান সম্রাট বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য। এলাকাবাসীর দাবি, এ ধরনের হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত একজন নেতাকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনা উচিত। পাশাপাশি, তার করা মামলায় যারা মিথ্যা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন, তাদের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।