জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী কক্সবাজারে সত্য উন্মোচন করেছেন। সেই সত্য উন্মোচন করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দলের সংগঠকের মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় বলেছিলাম, বাধা দিলে বাধবে লড়াই। আজও একই কথা বলতে চাই।’
আজ রোববার রাত ৮টায় চট্টগ্রাম নগরের ঐতিহাসিক বিপ্লব উদ্যানে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ শেষে সমাবেশে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। এনসিপি তারুণ্যের শক্তি ধারণ করে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘এ শক্তিকে থামানো যাবে না।’
১ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরু করেছে এনসিপি। এর অংশ হিসেবে গতকাল বিকেল পাঁচটায় চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকা থেকে পদযাত্রা শুরু করে দলটি। গত বছরের ১৮ জুলাই বহদ্দারহাটে আন্দোলন চলাকালে পাঁচজন শহীদ হন। বহদ্দারহাট হয়ে উঠেছিল প্রতিরোধের কেন্দ্র। এ কারণে সেই বহদ্দারহাট এলাকা থেকেই চট্টগ্রামের পদযাত্রা শুরু করা হয়।
বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর, ষোলশহর হয়ে পদযাত্রা এসে থামে বিপ্লব উদ্যানে। সেখানে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রামকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নানা পরাশক্তি চট্টগ্রামের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছে। আমরা হুঁশিয়ার করতে চাই, চট্টগ্রাম বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার অংশ। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের ভিত্তি। যদি চট্টগ্রামের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকায়, সমগ্র বাংলাদেশ বিদ্রোহ ঘোষণা করবে।’
পরিকল্পিতভাবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলা হয়নি বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, এ শহরে নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। এই ঐতিহাসিক শহর অবহেলা ও লুটপাটের কারণে বেহাল হয়ে পড়ে আছে। এনসিপি চট্টগ্রামকে নতুন করে গড়ে তুলতে চায়।
এনসিপির কর্মসূচি উপলক্ষে বিপ্লব উদ্যান লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল। নগরের ৪১টি ওয়ার্ড থেকে দলটির নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে সভাস্থলে এসে জড়ো হন। তাঁরা নানা ধরনের স্লোগান দেন। দলের যুব উইং, নারী উইং, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ একাধিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সন্ধ্যার আগেই সভাস্থলে এসে পৌঁছান। কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে ওঠার পর স্লোগান ও করতালির মাধ্যমে তাঁদের স্বাগত জানানো হয়।
এনসিপির এ কর্মসূচি ঘিরে চট্টগ্রামে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। এমনকি নগরের স্টেশন রোড এলাকার যে হোটেলে এনসিপি নেতারা অবস্থান করেছিলেন, সেখানে নিরাপত্তায় ডগ স্কোয়াড ছিল।
‘আমরা রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি’
সমাবেশে এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা সফলভাবে স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পেরেছি, কিন্তু সফলভাবে রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। আমাদের এখন রাষ্ট্রগঠনে মনোযোগ দিতে হবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘যাঁরা অতীতে শাসন করেছেন, তাঁরা জানতেন যে দিন শেষে বাংলাদেশে থাকতে পারবেন না। তাঁরা ভারত, আমেরিকা অথবা লন্ডনে পালাবেন, সে জন্য আগে থেকেই ব্যবস্থা করে নিয়েছিলেন। তাঁরা তাঁদের সেকেন্ড হোম বানিয়েছেন। কিন্তু আমরা যাঁরা বাংলাদেশে থাকব, আমাদের বাংলাদেশকে নিয়েই ভাবতে হবে।’
দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন সমাবেশে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ থানা, পাসপোর্ট অফিস, শিক্ষা ভবনসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন। এ হয়রানি বন্ধ করতে হবে।
এনসিপির কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা, যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনূভা জাবীন, যুব শক্তির আহ্বায়ক মো. তারিকুল ইসলাম প্রমুখ।