গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় আরও একটি মামলা করা হয়েছে।
এবার এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার জনকে।
মঙ্গলবার গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মতিয়ার রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন বলে বুধবার জানিয়েছেন গোপালগগঞ্জ সদর থানার ওসি মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান।
তার মধ্যে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৪৪৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যরা অজ্ঞাতনামা আসামি।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান, সহসভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র শেখ রাকিব হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র কাজী লিয়াকত আলী লেকু, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম কবির, সাধারণ সম্পাদক আলিমুজ্জামান (বিটু), শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলী নাঈম খান জিমি, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এম মাসুদ রানা, সাবেক সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নীতীশ রায়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১৬ জুলাই এনসিপির গোপালগঞ্জ পৌর পার্কের উন্মুক্ত মঞ্চের সমাবেশস্থলে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা হামলা চালিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং স্বাভাবিক কাজ থেকে বিরত রাখে। আসামিরা রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংগঠিত করে। সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি কর্মচারীদের আক্রমণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ককটেল নিক্ষেপ করে যৌথ বাহিনীর সদস্যদের মারধর ও গুরুতর জখম করে।
গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলা, জেলা কারাগারসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়ানোর অভিযোগে ও হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১৩টি মামলা করা হয়েছে।
জেলার সদর, কাশিয়ানী, টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া থানায় মামলাগুলো করা হয়। এসব মামলায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১ হাজার ১৩৪ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ১৪ হাজার ৪৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৩২৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এর আগে, গত ২৬ জুলাই নিহত রমজান মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা এ মামলায় উল্লেখ করা হয়নি।
গত ১৯ জুলাই রাতে চার যুবক নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় চারটি হত্যা মামলা করে। চার মামলায় অজ্ঞাত পাঁচ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করা হয়।
এ ছাড়া গোপালগঞ্জ সদর থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে দুটি এবং জেলা কারাগারে হামলার ঘটনায় একটি মামলা করা হয়।
অন্যদিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কাশিয়ানী থানায় দুটি, কোটালীপাড়ায় একটি এবং টুঙ্গিপাড়া থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।
গত ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচিতে দফায় দফায় হামলার পর পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষের মধ্যে চারজন নিহত এবং অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক আহত হন।
প্রথম দিন নিহত চারজন হলেন- শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৭), শহরের শানাপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন।
গুরুতর আহত অবস্থায় ১৬ জুলাই রাতেই তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। একদিন বাদে বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে মারা যান অটোরিকশা চালক রমজান মুন্সী।
ঘটনার দিন বিকালেই শহরে ১১৪ ধারা ও পরে রাত থেকে কারফিউ জারি করা হয়। এরপর একাধিকবার কারফিউর সময় বাড়িয়ে সবশেষ ২০ জুলাই তা প্রত্যাহার করে নেয় জেলা প্রশাসন। তারপর থেকে গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করে।