রামু (কক্সবাজার) প্রতিনিধি •
কক্সবাজারের রামুতে মামলা প্রক্রিয়ায় পুলিশের পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতিস্বীকার করে আইন প্রয়োগে বৈষম্য করেছেন।
ঘটনার সূত্রপাত ১৬ জুলাই, কক্সবাজারের রামুতে ছাত্র প্রতিনিধিদের উদ্যোগে দুইজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতদের একজন জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসেনের বড় ভাই ও উখিয়ার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবদুর রহিম এবং অপরজন রামুর চৌমুহনী এলাকার ‘খেলাঘর’ দোকানের কর্মচারী মোহাম্মদ রিদোয়ান।
জানা গেছে, মোহাম্মদ রিদোয়ানকে একটি রাজনৈতিক মামলায় আদালতে পাঠানো হলেও, আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ছাত্রদের দমন, হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো একাধিক অভিযোগ থাকলেও তাকে মাত্র ১৫১ ধারায় (সাধারণ আইন-শৃঙ্খলা ব্যাঘাতের অভিযোগে) চালান দেওয়া হয়। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে।
এ ঘটনায় স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, পুলিশ পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করে দেশের আইনের শাসন ও ন্যায়ের ভিত্তি দুর্বল করছে। তারা এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন এবং দোষীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র প্রতিনিধি জসীম উদ্দীন অভিযোগ করেন, “আবদুর রহিম আন্দোলনরত ছাত্রদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছিলেন। মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আমাদের আন্দোলন দমন করতে চেয়েছিলেন। অথচ তাকে রাজনৈতিক মামলায় না দিয়ে হালকা ধারায় ছাড় দেওয়া হয়। এটি ওসির পক্ষপাতিত্বের পরিষ্কার প্রমাণ।”
রিদোয়ানের বাবা মনসুর আলম অভিযোগ করেন, “আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না। বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল তাকে হয়রানি করা।”
এই বিষয়ে আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিপ্ত বড়ুয়া বলেন, “একই ধরনের অভিযোগে আটক দুজনের একজনকে রাজনৈতিক মামলায় ও অপরজনকে ১৫১ ধারায় চালান দেওয়া স্পষ্টভাবে পক্ষপাতিত্ব এবং পুলিশের ‘ব্যাড প্র্যাকটিস’-এর উদাহরণ। বিষয়টি তদন্ত হওয়া উচিত।”
তবে রামু থানার ওসি মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান দাবি করেছেন, “আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় তাকে ১৫১ ধারায় চালান দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুনরায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হবে।”
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, “আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তিনি সরকারি চাকরিজীবী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকায় আমরা তাকে হালকা ধারায় চালান দিয়েছি।”
স্থানীয় পর্যবেক্ষক ও সচেতন মহলের দাবি, এই ধরনের পক্ষপাতমূলক আচরণ পুলিশের প্রতি জনআস্থা নষ্ট করছে। তারা দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার প্রকৃত চিত্র উন্মোচনের আহ্বান জানিয়েছেন।