রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতারা আবাসিক হলে অবস্থান করছেন। ক্যাম্পাসে অবস্থানকালীন সময়ে তারা বিভিন্ন ধরনের নাশকতার পরিকল্পনাও করছেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (৩০ জুলাই) রাতে তিন ছাত্রলীগ নেতাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় আটক করেছে শেরেবাংলা নগর থানা পুলিশ।
তবে পরবর্তীতে আটক হিসেবে দুইজনকে দেখানো হয় এবং একজনকে বিশেষ সুপারিশে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
ছাত্রদলের নেতারা মূলত বলছেন, গতবছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশে আবারও অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ অবস্থায় নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বেশ কিছুদিন যাবৎ গুপ্ত নাশকতার পরিকল্পনা করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ছাত্রলীগের নেতা পরশের নেতৃত্বে একটি গুপ্ত পরিকল্পনার ছক ফাঁস হলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের তিন নেতাকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা শরিফ জানান, আগস্ট মাসকে ঘিরে দেশব্যাপী অরাজকতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ছাত্রলীগ ও ফ্যাসিস্টদের কিছু নেতা-কর্মী নিয়মিত জুম মিটিং করছে। পলাতক অনেকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে উঠেছে এবং হলে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেকেন্ড গেটের চায়ের দোকানে নিয়মিত আড্ডা দেয় এবং ঢাকায় কোনো গোপন কর্মসূচি থাকলে হলে এসে অবস্থান করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা কয়েকদিন তাদের পর্যবেক্ষণ করি এবং বিভিন্নভাবে তথ্য সংগ্রহের মধ্যে দিয়ে নিশ্চিত হই যে তারা একত্রিত হচ্ছে এবং কিছু একটা করার পরিকল্পনা করছে। এরপর সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের রুমে যাই এবং প্রক্টরকে ফোন করি। কিন্তু তিনি আসতে রাজি হননি। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে জানানো হয় এবং সন্দেহভাজনদের পুলিশের জিম্মায় দেওয়া হয়।
আটক হওয়া ছাত্রলীগ নেতারা হলেন মীর আসাদ আল রহমান সায়েম, তৌফিক ই মওলা ও আল সাদি পিয়াল। তবে পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায় আটক হওয়া তিনজন ছাত্রলীগ নেতার মধ্যে আল সাদি পিয়ালকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
আটকের পরে ছাড়া পাওয়া ছাত্রলীগ নেতা আল সাদি পিয়াল যুবদল নেতা কৃষিবিদ কে এম সানোয়ার আলমের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করছিল বলে সানোয়ারের নিজের জবানবন্দিতে জানা যায়।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতাদের সহায়তায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে থাকছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
আল সাদি পিয়াল ছাড়া পাওয়ার বিষয়ে শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, আমরাও ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার সঙ্গে যুবদল নেতা সানোয়ার ভাইয়ের সহযোগিতার গুঞ্জন শুনেছি, যা আমাদের কাছে অসত্য মনে হয়েছে। তবে সত্য হলে এটা করা ঠিক হয়নি বলেই আমাদের মত। কেননা সানোয়ার ভাই নিজেও দুঃসময়ের কর্মী, তিনি কোনো ছাত্রলীগ কমীকে আশ্রয় দেবেন তা মেনে নেওয়া যায় না। তবে আমি ছাত্রলীগ নেতা ছাড়া পাওয়ার মূল দায় পুলিশকে দিতে চাই।
এ বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানার অসি মোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের পোস্টধারী দুইজন নেতাকে শেকৃবি ক্যাম্পসের ছাত্রদল নেতা এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমাদের হাতে তুলে দেয়। তদের বিরুদ্ধে মূলত বিভিন্ন ঝটিকা মিছিল এবং অপতৎপরতার অভিযোগ রয়েছে যা বর্তমানে তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে।