ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে প্রশাসনের ব্যর্থতা ও ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ফল হিসেবে অবিহিত করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) খায়রুল কবির খোকন।
ডাকসু নির্বাচন, ছাত্রদলের ব্যর্থতার কারণ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা প্রভৃতি বিষয়ে কথা বলেছেন নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন খালিদ হোসেন।
এবার ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের ফলাফল আপনি কীভাবে দেখছেন?
খায়রুল কবির খোকন: এটা নিয়ে অনেক কথা বলার আছে। নির্বাচনটা নির্বিঘ্ন, অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়ার কথা থাকলেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। আমাদের প্যানেল ১২টি অভিযোগ করেছে। আবিদ, হামীমসহ প্রার্থীরা বলেছে—জাল ভোট হয়েছে, কিছু ধরা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে।
আপনারা তো ডাকসু নির্বাচনে জয়ী মানুষ। সেসব অভিজ্ঞতা কী এবারের নির্বাচনে কাজে লাগাতে পেরেছেন?
খায়রুল কবির খোকন: আমরা ১৯৯০ সালে নির্বাচিত হয়েছিলাম সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময়। তখন প্রচারণা চালানোর সুযোগ ছিল—লিফলেট, পোস্টার, মধুর ক্যান্টিনে বসা। কিন্তু এবার আচরণবিধিতে বহিরাগত নিষিদ্ধ থাকায় সাবেক নেতারা সরাসরি অংশ নিতে পারেননি। এখনকার প্রজন্ম ফেসবুক, অনলাইন, মিডিয়ায় প্রচার করেছে। আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত ছিল।
ছাত্রদলের বিপর্যয়ের মূল কারণ কী বলে মনে করেন?
খায়রুল কবির খোকন: ছাত্রদলের নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা বলেছে—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত অনেকে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, আবার আওয়ামীপন্থি শিক্ষকও আছেন। ছাত্রলীগও প্রভাব খাটিয়েছে। শিক্ষক-প্রশাসকরা সবাই মিলে কাজ করেছেন। তাই ছাত্রদলের বিপর্যয় হয়েছে।
অনেকে মনে করেন এই পরিবেশে নির্বাচন করা উচিত হয়নি। তবে আমি মনে করি, নির্বাচন দরকার ছিল—কারণ নির্বাচনে অংশ নিলেই জনগণের কাছে যাওয়া যায়।
নির্বাচন কি ম্যানিপুলেট করা হয়েছে?
খায়রুল কবির খোকন: অবশ্যই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ দলের পক্ষপাতদুষ্ট হিসেবে চিহ্নিত। আওয়ামীবান্ধব প্রশাসন, শিক্ষক-কর্মচারীরা ভোটিং ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে। কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে, সব ধরা যায়নি। প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা কাউন্টিং সেন্টারে ঢুকতে পেরেছে, আমাদের প্রার্থীরা পারেনি। এটা বড় অনিয়ম।
এ বিপর্যয়ে ছাত্রদলের সাংগঠনিক দায় আছে কি না?
খায়রুল কবির খোকন: হয়তো সাংগঠনিক দূরদৃষ্টি কিছুটা কম ছিল। তারা গভীরে ভাবেনি কী হতে পারে। আমরা সব সময় বলেছি জাতীয় নির্বাচন নিয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ডাকসুতেও তার প্রতিফলন হয়েছে। তবে মূল দায় প্রশাসনের পক্ষপাত।
এই প্রেক্ষাপটে ছাত্রদলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন?
খায়রুল কবির খোকন: না, এখনই সে কথা বলছি না। বিশ্লেষণ করতে হবে। কেন বিপর্যয় হলো, তার ব্যাখ্যা ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্বই দেবে। আমরা সাবেক নেতারা মতামত দেবো, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সংগঠন।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।