জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভায় অংশগ্রহণ করায় কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কবিরসহ তিন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে জেলা যুবলীগ। রোববার (২৭ জুলাই) দিবাগত রাতে কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশে তাদের দলীয় পদসহ প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কৃত অন্য দুজন হলেন—কিশোরগঞ্জ জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান সোহেল ও ইটনা উপজেলা যুবলীগের সদস্য বাসেত আহমেদ।
জানা গেছে, গত ২৬ জুলাই কিশোরগঞ্জ শহরের পুরানথানা এলাকায় অনুষ্ঠিত এনসিপির পদযাত্রা ও পথসভায় ইটনা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মঞ্চে উঠে বক্তব্য দেন। এরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে দলের ভেতরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যা যুবলীগের গঠনতন্ত্রের পরিপন্থি। দলীয় সিদ্ধান্তে উল্লেখ করা হয়, ‘জুলাই সন্ত্রাসীদের দল’ হিসেবে চিহ্নিত এনসিপিতে যোগদানের মাধ্যমে তারা খুনিদের সঙ্গে ঐক্য ও সংহতি প্রকাশ করেছেন। এই অভিযোগে কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নির্দেশে যুবলীগের দলীয় গঠনতন্ত্রের ২২(ক) ধারা অনুযায়ী শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এ ছাড়া শ্যামলের বাবা ওমর ফারুক ইটনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এবং সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনিও ছিলেন ইটনা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে কিশোরগঞ্জ জেলা যুবলীগের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করা হয়। এতে স্বাক্ষর করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বকুল, যুগ্ম আহ্বায়ক মীর আমিনুল ইসলাম সোহেল এবং মো. রুহুল আমিন খান। তবে তিনজনই বর্তমানে পলাতক থাকায় তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে গোলাম কবির শ্যামল বলেন, তিনি এখন আর যুবলীগের সঙ্গে নেই। ২০১৮ সালেই যুবলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন দাবি করে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়েছি, পরে জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয়ভাবে মাঠে ছিলাম। আওয়ামী লীগ করে শুধু প্রতারিত হয়েছি। এখন শুধু এনসিপিতে যোগ দিচ্ছি না, ইটনায় সংগঠন গড়ে তুলতে কাজও করছি।
কিশোরগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য স্থগিত হওয়া কমিটির আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আসলে ইটনার যে কমিটি হয়েছে, তারা কেন্দ্রীয় কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজেদের কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত করে কমিটি এনেছে। এই বিষয়ে আমি অবগত নই। তা ছাড়া আমরা জানতে পেরেছি, শ্যামল অনেক আগেই যুবলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন।
এ সময় প্রতিবেদক জানতে চান, ইটনা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল যে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন, তার কোনো রিসিভ কপি আছে? দল যে তার পদত্যাগপত্র ওই সময় গ্রহণ করেছে এমন কোনো কপি আপনাদের দিয়েছেন? তখন তিনি বরেন, সে পদত্যাগ করেছে এমন একটি কাগজ আমাদের দেখিয়েছেন, তবে যুবলীগ যে পদত্যাগপত্র রিসিভ করেছে এমন কোনো কাগজ দেয়নি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে এই ছাত্র নেতা বলেন, শ্যামলের বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন করলে দল থেকে সহযোগিতা না পেয়ে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে ২০১৮ সালে পদত্যাগ করেছেন আমাদের বলেছেন। যদিও এরপরেও ফেসবুকে আওয়ামী লীগের দলীয় বিভিন্ন পোস্ট দিতে দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে তিনি (গোলাম কবির শ্যামল) এনসিপির হয়ে কাজ করছেন। গত ৫ জুন অনুমোদন হওয়া ইটনা উপজেলা জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক কমিটিতে ২নং সদস্য হিসেবে তার নাম রয়েছে।
প্রসঙ্গত, এনসিপির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর স্বাক্ষরে গত ৫ জুন তিন মাসের জন্য ২১ সদস্যের ইটনা উপজেলা কমিটি গঠিত হয়। এতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পান মো. নাজমুল ঠাকুর, যুগ্ম আহ্বায়ক চারজন এবং সদস্য ১৬ জন। গোলাম কবির শ্যামল ছিলেন কমিটির ২ নম্বর সদস্য। একই কমিটিতে কামরুজ্জামান সোহেল ছিলেন ৪ নম্বর এবং বাসেত আহমেদ ১১ নম্বর সদস্য।