অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের ডিউটিতে না যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে সিএমপি কমিশনারের বেতার বার্তা ‘ফাঁসের’ ঘটনায় এক পুলিশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার রাতে চট্টগ্রাম মেটোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) খুলশী থানার ওয়্যারলেস অপারেটর অমি দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তার বিরুদ্ধে সিএমপি কমিশনারের বেতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।
সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (সদর) মাহমুদা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের অভ্যন্তরীণ একটি বিষয়ে তদন্তের জন্য এক পুলিশ সদস্যকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কমিশনার স্যারের ওয়ারলেস অর্ডার ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় খুলশী থানার ওয়ারলেস অপারেটর অমি দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে।”
এ বিষয়ে জানতে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
সম্প্রতি চট্টগ্রামে এক পুলিশ সদস্য হামলার শিকার হওয়ার পর সিএমপি কমিশনার অস্ত্র, গোলাবারুদ ছাড়া কাউকে ডিউটি করতে না যাওয়ার নির্দেশনা দেন।
গত ১২ অগাস্ট রাতে এক বেতার বার্তার মাধ্যমে সিএমপি কমিশনারের এ নির্দেশনা পুলিশ সদস্যদের জানিয়ে দেওয়া হয়।
পুলিশের সামনে কোনো অস্ত্র বের করা হলে সাথে সাথে গুলি করার নির্দেশনাও দেওয়া হয় ওই বেতার বার্তায়।
আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিলের খবর পেয়ে গত ১১ অগাস্ট রাতে নগরীর বন্দর থানার ইশান মিস্ত্রি ঘাট এলাকায় অভিযানে যায় পুলিশ। সেখানে আবু সাঈদ রানা নামে এক এসআইকে কুপিয়ে জখম করে ‘সন্ত্রাসীরা’।
পরদিন সিএমপির পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া বেতার বার্তায় সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজকে বলতে শোনা যায়, “২০২৪ সালের ৫ অগাস্টের আগের নিয়ম অনুযায়ী লাইভ অ্যামিউনেশন ছাড়া কোনো পার্টি থানা থেকে আউট হবে না। রাবার বুলেট দিয়ে কাজ হবে না। আই রিপিট এগেইন, রাবার বুলেট দিয়ে কাজ হচ্ছে না।”
বন্দর থানার পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওই পরিস্থিতিতে পরলে দুই চারটা লাশ ছাড়া যেন কোন মোবাইল পার্টি ফেরত না আসে।”
তিনি আরও বলেন, “সোজা কথা, কোনো টহল পার্টির সামনে অস্ত্র বের করা মাত্র, আই রিপিট অস্ত্র বের করা মাত্র, সেটা আগ্নেয়াস্ত্র হতে পারে, ধারালো অস্ত্র হতে পারে। পুলিশ পার্টির সামনে অস্ত্র বের করা হলে গুলি হবে, এতে কোনো সন্দেহ নাই।”
দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “অস্ত্র বের করা মাত্র গুলি হবে। মাথায়, বুকে, পিঠে করবে। সরকারি গুলির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।”
সিএমপি কমিশনারের ওই বেতার বার্তার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়।
গেল বছর জুলাই-অগাস্টের আন্দোলন দমনে নির্বিচার অস্ত্র ব্যবহার করে ভাবমূর্তি সংকটে থাকা পুলিশ বাহিনীকে আর কোনো মারণাস্ত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল সরকার।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত ১২ মে সচিবালয়ে বলেছিলেন, পুলিশ বাহিনীকে আর কোনো মারণাস্ত্র দেওয়া হবে না। আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, “পুলিশের হাতে যেন আর কোনো মারণাস্ত্র না থাকে, এগুলো তাদের জমা দিয়ে দিতে হবে। কোনো মারণাস্ত্র আর অস্ত্র পুলিশের হাতে থাকবে না। কিন্তু আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) হাতে থাকবে।”