1. admin1@shimantoshohor.com : ডেস্ক নিউজ • : ডেস্ক নিউজ •
  2. nrakash261@gmail.com : সীমান্ত শহর ডেস্ক: : NR Akash
  3. admin@shimantoshohor.com : প্রকাশক : সীমান্ত শহর ডেস্ক: Islam
  4. alamcox808@gmail.com : ডেস্ক নিউজ : : ডেস্ক নিউজ :
শিরোনামঃ
উখিয়ার সাংবাদিক তানভীর শাহরিয়ারকে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তারে মানববন্ধন বিএনপিতে যোগ দিলেন জামায়াতের দুই নেতা চকরিয়ায় অস্ত্রসহ আন্তজেলা ডাকাত দলের ৪ সদস্য গ্রেপ্তার বাংলাদেশে ঢুকছে ২ লাখ কোটি টাকা জাল নোট: পোস্টে জুলকারনাইন মাথা কেটে অপারেশনে দুই মাসের হাবিবার মৃত্যু, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে উল্টো অভিযোগ চিকিৎসকের জামায়াত ক্ষমা না চাইলে ক্ষমতায় যেতে পারবে না: কাদের সিদ্দিকী এসএমপির নথি ফাঁস: বিব্রত পুলিশ, নেপথ্যে আ’লীগ দোসর মেধা তালিকায় নেই, বিশেষ সুবিধায় হলে থাকেন ছাত্রদল-শিবির-বাগছাসের ৪ চাকসু ও হল সংসদ প্রার্থী ক্যান্সার আক্রান্ত হেফাজত নেতা ফারুকীর পাশে দাঁড়ালেন বিএনপি নেতা কায়কোবাদ রেজুখাল চেকপোস্টে ইয়াবাসহ তিন পাচারকারী গ্রেফতার

আরাকান আর্মির আতঙ্কে টেকনাফের জেলেরা, ২২ দিনে ৫৮ জনকে অপহরণ

✍️ প্রতিবেদক: প্রথম আলো

  • আপডেট সময়ঃ বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০২৫
  • ১০৮ বার পঠিত

কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদী ও সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেদের প্রায়ই অস্ত্রের মুখে অপহরণ করছে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গত ২২ দিনে অন্তত ৫৮ জনকে অপহরণ করে মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন ও জেলেদের সূত্রে জানা গেছে। ৫ আগস্ট থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এসব অপহরণের ঘটনা ঘটে। গতকাল পর্যন্ত তাঁদের একজনকেও ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। সর্বশেষ গতকাল সেন্ট মার্টিন ও নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে তিনটি নৌযান এবং ১৮ জন জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।

টেকনাফের পৌরসভার কায়ুকখালিয়া ঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২৫০টি মাছ ধরার নৌযানে তিন হাজার জেলে নাফ নদীর মোহনা ও সাগরে মাছ ধরতে যায়। কায়ুকখালিয়া ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমদ আজ বুধবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, সাগর ও নদীর মোহনায় মাছ ধরতে গিয়ে এখন টেকনাফের জেলেদের সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। অস্ত্রের মুখে জেলেদের অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছে আরাকান আর্মি। অনেক সময় নৌযানে থাকা মাছ, জ্বালানি, খাদ্যসামগ্রীসহ অন্যান্য মালামাল লুট করা হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মাছ ধরাই বন্ধ করে দিতে হবে জেলেদের।

সাজিদ আহমদ বলেন, রাখাইন রাজ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে নাফ নদীর মিয়ানমার অংশে মাছ ধরায় একধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে আরাকান আর্মি। তারা বাংলাদেশি জেলেদেরও নদীতে মাছ ধরার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করছে। রাখাইনে খাদ্যসংকটের কারণে বাংলাদেশি জেলেদের নৌযান ও মালামাল লুট করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, প্রায় প্রতিদিনই আরাকান আর্মির সদস্যরা সাগর থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশি জেলেদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। গত তিন সপ্তাহে প্রায় ৫৮ জনকে অপহরণ করা হয়েছে বলে ট্রলার মালিক সমিতি জানিয়েছে। বেশি ঘটনা ঘটছে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায়। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। ভাটার সময় ওই এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার চিন্তা–ভাবনা করা হচ্ছে।

জেলেদের অভিযোগের বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারে টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান।

মিয়ানমারের মংডুর সঙ্গে বাংলাদেশের ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। নাফ নদীটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমানা ভাগ করে রেখেছে। মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে টানা ১১ মাসের সংঘাতের পর গত বছরের আগস্টে রাখাইনের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মংডু শহর নিয়ন্ত্রণ নেয় আরাকান আর্মি।

স্বামী ও দুই সন্তানের অপেক্ষায় দিন কাটছে মাবিয়ার
১২ আগস্ট একটি নৌযানে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়ার বাসিন্দা মো. ইলিয়াছ (৪১) এবং তাঁর দুই ছেলে আক্কল আলী (২০) ও মো. নুর হোসেনসহ (১৮) পাঁচ জেলে। ওই দিন তাঁদের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মিয়ানমারে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। এর পর থেকে তাঁদের আর খোঁজ নেই।

আজ জালিয়াপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পলিথিন ও বাঁশের ঘেরা দিয়ে তৈরি জেলে ইলিয়াছের বসতঘর। সেই ঘরের দরজার পাশে বসে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী মাবিয়া খাতুন। কাছে গিয়ে স্বামী-সন্তানের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে উঠেন তিনি। জানান, স্বামী ও দুই সন্তানের অপেক্ষায় তাঁর দিন কাটছে। ঘরে থাকা ছেলে হাফেজ উল্যাহ বাবা-ভাইকে ফিরে পেতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত। স্বামী-সন্তানকে অক্ষত অবস্থায় ফেরত চান তিনি।

মাবিয়া খাতুন বলেন, তাঁদের কোনো জায়গাজমি নেই। তাঁর স্বামী-সন্তান মাছ ধরে সংসার চালান। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা আর জাল তৈরি করেছেন। এখন স্বামী-সন্তান নিখোঁজ থাকায় ঋণ পরিশোধ দূরে থাক পরিবারের খরচ চালানোই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাবিয়ার স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে নিখোঁজ থাকা অপর দুজনও একই এলাকার বাসিন্দা। তাঁরা হলেন কালু মিয়ার ছেলে সাবের হোসেন (২২) এবং মোহাম্মদ নুর হোসেনের ছেলে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম (২৫)।

শাহপরীর দ্বীপ ক্ষুদ্র মৎস্য সমিতির সভাপতি আবদুল গনি বলেন, মাবিয়ার স্বামী-সন্তানসহ ১২ আগস্ট পাঁচজনকে অপহরণের বিষয়টি বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে অবহিত করা হয়েছে। আরাকান আর্মির কাছ থেকে ২২ দিনেও তাঁদের উদ্ধার করা যায়নি। তাঁদের পরিবার খুবই দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

৫ আগস্ট সকালে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজিরপাড়া সংলগ্ন নাফ নদীর জলসীমানা থেকে জাল, নৌকাসহ টেকনাফ পৌরসভার দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার মো. তৈয়বের ছেলে উসমান গনি (৩২) ও মো. হোসেনের ছেলে আবদুল করিম (৪০) ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। জানতে চাইলে উসমান গনির বাবা মো. তৈয়ব বলেন, ‘ছেলেরে নিয়ে গেছে প্রায় ২২ দিন, তার কোনো খোঁজখবরই পাইতেছি না। আমি আমার ছেলেরে ফেরত চাই।’

গতকাল আরাকান আর্মির ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের একটি নৌকায় শাহপরীর দ্বীপের ডাঙ্গর পাড়া গ্রামের পাঁচ বাসিন্দা ছিলেন। তাঁরা হলেন ইমাম হোসেন, রশিদ আলম, জাহাঙ্গীর আলম, নুর আলম ও মনজুর আলম। রশিদ আলমের বাবা কালু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পরিবারে ১১ জন সদস্য রয়েছে। রশিদ আলমের উপার্জনেই সংসার চলে। এখন ছেলে নিখোঁজ থাকায় পরিবারের সদস্যদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে।

টেকনাফের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, আরাকান আর্মির ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের স্বজনেরা প্রতিদিন পরিষদে এসে ভিড় করছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

জেলে পরিবারে আতঙ্ক
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অধিকাংশ বাসিন্দাই জেলে। কয়েক সপ্তাহ ধরে আরাকান আর্মির হাতে জেলে অপহরণের ঘটনায় এলাকার জেলে পরিবারগুলোয় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে মাছ ধরতে সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছেন।

শাহপরীর দ্বীপের মাঝেরপাড়ার বাসিন্দা খলিলুর রহমান জানান, শাহপরীর দ্বীপের ঘাট থেকে ২৫ থেকে ৩৫টি মাছ ধরার বড় নৌযান নিয়মিত মাছ শিকার করে। আরাকান আর্মির কারণে এসব নৌযানের জেলেরা এখন মাছ ধরতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যরাও তাঁদের মাছ ধরতে যেতে দিতে চাচ্ছেন না। খলিলুর রহমান বলেন, ‘সাগরে মাছ ধরে আমরা বড় হয়েছি, আর কোনো কাজ পারি না। এখন অন্য কিছু করে খাব, সে উপায় নেই। পরিবারের সাত সদস্যের খরচ চালানো নিয়ে আমি নিজেও টেনশনে আছি।’

জেলেরা জানান, গত ৫ আগস্ট থেকে জেলেদের অপহরণের ঘটনা বেড়েছে। তবে এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল। গত ১৩ জুন তিনটি নৌযান অস্ত্রের মুখে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। মাছ ধরার নৌযানগুলোর প্রতিটিতে ৬ থেকে ৮ জন করে জেলে ছিল। পরে তাঁদের মারধর ও মাছ লুটপাট করে ছেড়ে দেওয়া হয়।

গত ১২ মে টেকনাফের হ্নীলাসংলগ্ন নাফ নদী থেকে সিদ্দিক হোসেন (২৭), রবিউল আলম (২৭) ও মাহমুদ হোসেন (৩০) নামের তিন বাংলাদেশিকে নৌকাসহ ধরে নিয়ে আরাকান আর্মি। দুই দিন পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ৫ মার্চ সেন্ট মার্টিন উপকূলে মাছ ধরার সময় ৬টি নৌযানসহ প্রায় ৫৬ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের নৌবাহিনীর সদস্যরা। গত ২০ ফেব্রুয়ারি টেকনাফের নাফ নদী থেকে চারটি মাছ ধরার নৌকাসহ ১৯ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে যায়। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি নৌযান ফেরত আনা হয়েছে।

শাহপরীর দ্বীপ মাঝেরপাড়া ঘাট ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল গফুর বলেন, একের পর এক জেলে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। জেলেরা শঙ্কিত, আতঙ্কগ্রস্ত। জেলেরা যাতে নিরাপদে মাছ ধরতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক।’

পোষ্টটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরো খবর
© 2025 Shimanto Shohor
Site Customized By NewsTech.Com