রাজধানীতে মাদকবিরোধী একদিনের অভিযানে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ কোকেনসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। মঙ্গলবার ডিএনসি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক গোলাম আজম এসব তথ্য জানান। সমপ্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার হওয়ায় এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। তিনি আরও জানিয়েছেন, দেশে কোথাও বৈধভাবে পরিচালিত কোনো সিসা বার নেই তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন রেস্তরাঁর আড়ালে অবৈধভাবে এসব সিসা বার পরিচালনা করে আসছে। তিনি বলেন, গত ২৫শে আগস্ট রাজধানীর আদাবর থানার বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটির একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে মো. খাইরুল ইসলাম রিয়ান (২৬)কে ৪ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে একই দিন শেখেরটেক এলাকায় আরেকটি বাসায় অভিযান চালিয়ে একাধিক মামলার আসামি মিলন মোল্লার কাছ থেকে ১ কেজি ৬০০ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস) উদ্ধার করা হয়। এই মামলার মূল হোতা সৌরভ ইসলাম শান্ত ওরফে তোফায়েল হোসেন শান্ত এবং ইয়াছমিন আক্তার আঁখি পলাতক রয়েছেন। সৌরভ ইসলাম শান্ত একজন তালিকাভুক্ত মাদক গডফাদার। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে একাধিক মামলা রয়েছে।
অন্যদিকে, একই দিন পল্টন মডেল থানার অধীন পুরাতন ডাক ভবনের বৈদেশিক ডাক বিভাগ থেকে ২৮০ গ্রাম টেট্রা হাইড্রো কুশ (এক ধরনের ক্যানাবিস) উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শহিদুল ইসলাম (৪৫) ও তার স্বীকারোক্তিতে শুকুর মোহাম্মদ রিপন (৫০)কে গ্রেপ্তার করা হয়।
দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ কোকেন উদ্ধার: মঙ্গলবার ভোরে বাংলাদেশ কাস্টমস ও ডিএনসি’র যৌথ অভিযানে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গায়ানার নাগরিক কায়রান পেটুলাকে ৮ কেজি ৬০০ গ্রাম কোকেনসহ আটক করা হয়। এটি দেশের ইতিহাসে একক অভিযানে উদ্ধার হওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ কোকেন। এর আগে সর্বোচ্চ ৮ কেজি ৩ গ্রাম কোকেন উদ্ধার হয়েছিল।
কোকেনের গন্তব্য বাংলাদেশ ছিল কিনা- এ বিষয়ে গোলাম আজম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই নারী ব্রাজিল থেকে কোকেন সংগ্রহ করে নিউ ইয়র্ক হয়ে কাতারের দোহার মাধ্যমে ঢাকায় প্রবেশ করেন। বাংলাদেশে কোকেনের উল্লেখযোগ্য বাজার নেই, তাই এটি অন্য কোনো দেশে পাচারের উদ্দেশ্যে আনা হয়ে থাকতে পারে। তদন্ত শেষে এটির গন্তব্য কোথায় ছিল তা জানা যাবে।
বৈধ সিসা বার নেই: সিসা বার সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত মহাপরিচালক গোলাম আজম বলেন, বাংলাদেশে কোনো সিসা বার বৈধভাবে পরিচালিত হচ্ছে না। বনানীতে ২১টি সিসা বার রয়েছে, ধানমণ্ডিতে একটি ছিল যা আমরা বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি বলেন, সিসায় যদি ০.২ শতাংশের বেশি নিকোটিন থাকে, তবে তা ‘খ’ শ্রেণির মাদক হিসেবে গণ্য হয়। এ ধরনের সিসা বারের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। তবে কিছু ব্যবসায়ী আদালতে ভুল তথ্য দিয়ে রিট করে ডিএনসি’র অভিযান ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল বলেও জানান তিনি। সমপ্রতি বনানীর থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি নামের একটি রেস্তরাঁয় সিসা বারের আড়ালে পরিচালিত অবৈধ কার্যক্রমে এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আজম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির আগের নাম ছিল এরাবিয়ান কোজি, যার বিরুদ্ধে ডিএনসি ইতিমধ্যে দু’টি মামলা করেছে। পরে তারা নাম পরিবর্তন করে পুনরায় একই অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ১২টি মামলা হয়েছে।
গডফাদারদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলা: মাদকের মূল হোতারা গ্রেপ্তার না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএনসি কর্মকর্তা বলেন, মাদকের মামলাগুলো সাধারণত যাদের কাছ থেকে মাদক উদ্ধার হয় তাদের বিরুদ্ধেই হয়। মূল হোতাদের বিরুদ্ধে সরাসরি মামলা করা কঠিন। এজন্য আমরা তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করি। তিনি আরও জানান, এখন পর্যন্ত ১২টি মানি লন্ডারিং মামলা করা হয়েছে এবং ২৭টি মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।